এই ঘটনা দিল্লির বাসিন্দা ভানুমতী সিং ও তাঁর স্বামী রতিপাল সিংয়ের। তাঁদের সন্তান ২২ বছর আগে বাড়ি ছএড়ে চলে যায়। হয়েছিল মায়ের সঙ্গে ঝগড়া। সেই থেকে একরত্তি ছেলেকে দেখতে উন্মুখ দম্পতি। রতিপালের পৈতৃক বাড়ি উত্তর প্রদেশের আমেঠির কারাউলি গ্রামে। এই দম্পতি ও তাঁর গোটা পরিবারকে কীভাবে একজন ‘ঠগী’ চোখের নিমেষে প্রতারণা করেছে, তার তথ্য উঠে আসছে এই হাড়হিম করা ঘটনায়।
রতিপালদের একমাত্র সন্তান পিঙ্কু বহু বছর আগেই বাড়ি ছেড়েছিল। এদিকে, সদ্য করউলি গ্রামে এক সাধুকে দেখা যায়, যাঁর কাছে পিঙ্কুর মতোই রয়েছে জন্মদাগ বা জরুল। সেখবর কানে যায় রতিপালের। স্ত্রীকে নিয়ে ছুঁটে যান গ্রামে। গ্রামে যেতে আত্মীয়রাও জোর করেন রতিপালদের। সাধুকে দেখা মাত্র কেঁদে আকুল হয়ে পড়েন স্ত্রী ভানুমতী। সন্তানকে ২২ বছর আগে শেষবার দেখেছিলেন। তাঁর চোখে সন্তান স্নেহের মায়া ছিল অফুরান! ঘটনায় উচ্ছ্বসিত হয় গ্রাম। দম্পতি মেনে নেয় ওই সাধু তাঁদেরই সন্তান পিঙ্কু। এই ঘটনা একমাস আগে হয়েছে।
এরপর রতিপালদের বাড়িতে এন্ট্রি নিয়েই পিঙ্কু-বেশী সাধু দাবি করেন যে, তাঁকে ঝাড়খণ্ডের পারসনাথ মঠ ফিরতে হবে। কারণ তিনি দীক্ষা নিয়েছেন। সেখানের অনুমতি নিতে হবে তাঁঁকে। রতিপালরা 'ছেলে'কে আর ছাড়তে চান না। তবে শেষমেশ সেই সাধু বাড়ি থেকে বের হন। গ্রামের মানুষ তাঁকে ১৩ কুইন্টাল শস্য, রতিপালের বোন ১১ হাজার টাকা দেন। এরপর সাধুর বেশের পিঙ্ু বলে নিজেকে দাবি করা ব্যক্তি ফোনে রতিপালকে জানান, যে মঠ তাঁকে বলেছে, যে ১০ লাখ টাকা না দিলে তাঁকে তাঁরা ছাড়বে না মঠ থেকে। ছেলেকে কাছে পেতে সেই ১০ লাখেরও ব্যবস্থা করে ফেলেন রতিপাল। এদিকে, রতিপাল মঠে যেতে চান। তবে পিঙ্কুবেশী সাধু দাবি করেন, রতিপাল যেন মঠে না যান। এই নিয়ে চতিনি রতিপালকে নানা অদ্ভুত যুক্তি দেন। এরপর রতিপালকে ইউপিআই বা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারে টাকা পাঠাতে বলে ওই সাধু। এখান থেকেই সন্দেহ হয় রতিপালের।
খোঁজ খবর নিয়ে রতিপাল জানতে পারেন যে ঝাড়খণ্ডে পারসনাথ মঠ বলে যে ঠিকানা ও মঠের কথা বলেছিল তাঁদের পিঙ্কু সেজে আসা সাধু, সেই মঠই নেই সেখানে। কাল বিলম্ব না করে রতিপাল দৌড়ন পুলিশের কাছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে। এরপর পুলিশ অভিযোগ পেয়ে যা জানতে পেরেছে, তাও চমকপ্রদ। জানতে পারা যায়, এলাকার গোন্ডা গ্রামের নফিস পিঙ্কু সেজে রতিপালদের পরিবারকে প্রতারণা করেছে। এই নফিসের ভাই রশিদও একইভাবে আরও এক সন্তান খোয়ানো পরিবারকে গিয়ে একই কীর্তি করেছিল ২০২১ সালে। পরিবারে দুই ভাই একই প্যাটার্নে অপরাধের কারবার চালাচ্ছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তদন্ত চলছে।