দীর্ঘদিন ধরেই জাতিগত হিংসায় জর্জরিত মণিপুর। গত মে মাস থেকে শুরু হওয়া হিংসার আগুনে পুড়ে এখনও পর্যন্ত কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন উত্তরপূর্বের এই রাজ্যে। বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে সশস্ত্র জঙ্গিদের। এরই মাঝে আবার নিজের দলের একটা অংশ থেকে ক্রমশ চাপে থাকছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। বীরেনের পদত্যাগের দাবিতে দিল্লিতেও গিয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। এই সবের মাঝেই সম্প্রতি নিজের পদত্যাপত্র লিখে রাজ্যপালের কাছে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বীরেন। তবে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা স্থির করলেও শেষ পর্যন্ত আর তা করা হয়নি তাঁর। রাজভবনের পথে মুখ্যমন্ত্রীকে আটকান তাঁর সমর্থকরা।
এদিকে কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বীরেন সিং? এই প্রশ্নের জবাবে সংবাদসংস্থা এএনআই-কে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি দেখেছি যে আমার রাজ্যে জায়গায় জায়গায় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা চালানো হয়েছে... গত কয়েক বছরে কেন্দ্র মণিপুরের জন্য যা করেছে এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার মানুষের জন্য যা করেছে তাতে একটা বিশ্বাসের জায়গা গড়ে উঠেছিল। তবে আমার মনে হয় মানুষের সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এটা ভেবে আমার খারাপ লেগেছিল। কয়েকদিন আগে বাজারে আমার নামে অথ্য ভাষায় গালি দিয়েছিল একদল মানুষ। এগুলো আমার ভালো লাগেনি। আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।'
এদিকে বীরেন রাজ্যপালের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন। তারা বীরেনকে পদত্যাগ না দেওয়ার অনুরোধ করেন। এমনকী তাঁর পদত্যাগপত্র নিয়ে তা ছিঁড়ে দেন তারা। এর কিছুক্ষণ পর বীরেন টুইট করে লেখেন, 'এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি পদত্যাগ করছি না।' এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বীরেন এএনআই-কে বলেন, 'কোনও নেতা মানুষের আস্থা ছাড়া নেতা থাকতে পারেন না। আমি মুখ্যমন্ত্রীর আবাস থেকে বেরিয়ে দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে রয়েছেন। আমি তা দেখে শান্তি পাই মনে। তারা আমার প্রতি আস্থা দেখান। আমার মনে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, তা ভুল প্রমাণিত করে এই ভিড়। কারণ মানুষ আমার সমর্থনে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। তারা আমাকে পদত্যাগ করতে বারণ করে। আর তারা যদি আমাকে পদত্যাগ করতে বলে, আমি তাহলে পদত্যাগ করব। তবে তারা যদি বাধা দেয়। আমি পদত্যাগ করব না।'
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে কুকি ‘জঙ্গিরা’ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরই মধ্যে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সেই রাজ্যে।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় আদিবাসীরা। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও।