ধর্মান্তরণবিরোধী আইন নিয়ে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং কেন্দ্রকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি হয়নি প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। পিটিশনকারীরা দাবি করেন, ‘লাভ জিহাদ’ আইনের অপব্যবহার করে মানুষকে হেনস্থা করা হচ্ছে।
একঝাঁক আইনজীবী এবং সমাজকর্মী তিস্তা সেতালভাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দুটি পিটিশনের শুনানির চলছিল শীর্ষ আদালতে। পিটিশনে এলাহাবাদের দুই আইনজীবী এবং আইন গবেষকের দাবি করেন, জননীতি, বৃহত্তর সমাজের পরিপন্থী আইন পাশ করেছে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড। একইসঙ্গে সংবিধানের মূল কাঠামোকে লঙ্ঘন করছে দুই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের আইন। মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, হরিয়ানা এবং অসমের মতো রাজ্যও যে ‘লাভ জিহাদ’ আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে, তা পিটিশনে জানানো হয়।
গত ২৪ নভেম্বর সেই বিতর্কিত অধ্যাদেশ চালু করেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। তার মাসখানেক আগেই ‘লাভ জিহাদ’-এ ইতি টানার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। মুসলিম পুরুষ এবং হিন্দু মহিলাদের বিবাহকে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবে উল্লেখ করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। পিটিশনে দাবি করা হয়, সমাজের খারাপ অংশের কাছে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে সেই অধ্যাদেশ। ভুয়ো মামলায় ফাঁসানোর সম্ভাবনাও আছে। এই অধ্যাদেশ পাশ হয়ে গেলে গুরুতর অবিচার হবে।
একই দাবি করে উত্তরপ্রদেশের অধ্যাদেশের উপর স্থগিতাদেশ জারির আর্জি জানান তিস্তা সেতালভাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আইনজীবী সিইউ সিং। তিনি সওয়ল করেন, বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাহিনী। সেই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আগেভাগে বিয়ের বিষয়ে জানানো এবং বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত যে হননি, তা প্রমাণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মানুষের উপর দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে শাফিন জাহান মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে বিবাহের ব্যক্তিগত অধিকারে রাজ্যগুলি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সেই ভিত্তিতে এই অধ্যাদেশ পুরোপুরি অযৌক্তিক।
সেই সওয়ালের নিরিখে তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘আইন প্রণয়ন যদি দমনমূলক বা মিথ্যা হয়, তাহলে কি কোনও আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়? সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে এলে এটাই সমস্যা হয়।’ প্রাথমিকভাবে মামলাটি গ্রহণের সময় বেঞ্চের তরফে হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। একই ধরনের মামলা এলাহাবাদ এবং উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে ঝুলছে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র উত্তরাখণ্ড বা উত্তরপ্রদেশের বিষয় নয় এটি, কারণ ২০১৯ সালে একই ধরনের আইন পাশ করেছে হিমাচল প্রদেশ। ২০১৮ সালে সেই ধর্মান্তরবিরোধী আইন পাশ করেছিল উত্তরাখণ্ড সরকার।