শিবসেনা হাতছাড়া হয়েছে উদ্ধব ঠাকরের। তবে দল ফিরে পেতে মরিয়া উদ্ধব ঠাকরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে দাবি করেছেন, যাতে একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীর বিধায়কদের পদ খারিজ করা হোক। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সর্বোচ্চ আদালত যদি বিধানসভার স্পিকারের দায়িত্ব পালন শুরু করে দেয়, তাহলে এর খুব গুরুতর প্রভা বপড়বে গণতন্ত্রে। অবশ্য উদ্ধবের দায়ের করা মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলে, 'এই বিষয়টি সাংবিধানিক গণতন্ত্রের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। আপনি একটি দলের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিধায়কদের আচরণ সংখ্যাগত শক্তি নির্বিশেষে পার্টি দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত... আদতে পার্টিই সর্বোচ্চ। বিধায়করা শুধুমাত্র দলের মতামত প্রকাশ করেন।' (আরও পড়ুন: 'অল ইজ ওয়েল', পালাবদলের জল্পনার মাঝে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে কী বললেন তেজস্বী?)
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পাশাপাশি সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন - বিচারপতি এমআর শাহ, বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পিএস নরসিংহ। বিধায়কদের আচরণ নিয়ে মন্তব্য করার পাশাপাশি সাংবিধানিক বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে, 'এটি এমন একটি মামলা যেখানে শেষ পর্যন্ত আপনি বলবেন যে তারা বিধায়ক পদে থাকার অযোগ্য। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা স্পিকারের নেওয়ার বিষয়।' আদালতের তরফে আরও বলা হয়, 'আপনি যদি বলেন যে আপনি স্পিকারের কাছে যেতে চান না এবং এই ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তাহলে তা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যদি আমরা এই বিষয়ে এক্তিয়ার গ্রহণ করি, তাহলে তা সাংবিধানিক কাঠামোর ওপর অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।'
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শিবসেনার শিন্ডে গ্রুপকেই দলের নাম ও প্রতীক ব্য়বহারের অনুমতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল উদ্ধব গোষ্ঠী। তবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে এই মামলায় সব পক্ষের উদ্দেশে নোটিশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে আদালত শিন্ডে গোষ্ঠীর কাছ থেকে জবাব চেয়েছে।
শিবসেনা নিয়ে এই বিবাদের শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি। সেই সময় মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকার ভাঙতে ৩০-এর বেশি বিধায়ক নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন একনাথ শিন্ডে। কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে শিবসেনার জোট সরকারের পতন হয়। মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারান উদ্ধব ঠাকরে। এর মাঝে গুজরাট, অসম ঘুরে আসেন একনাথ ও তাঁর অনুগামীরা। শেষ পর্যন্ত গোয়া হয়ে মুম্বইতে ফেরেন একনাথ। মনে করা হচ্ছিল, বিজেপির সঙ্গে নতুন জোট সরকাররে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন একনাথ। তবে সবাইকে অবাক করে শিন্ডেকেই মুখ্যমন্ত্রী করে দেয় বিজেপি।
একনাথ শিন্ডে দাবি করেন, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক এবং সাংসদ যেহেতু তাঁর সঙ্গে, তাই 'আসল' শিবসেনা তাঁর গোষ্ঠী। এই আবহে আদালতের দ্বারস্থ হন উদ্ধব ঠাকরে। ততদিনে শিবসেনা দু’ভাগ হয়ে যায়। একনাথ শিন্ডে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন শিবসেনার দখল নেওয়ার জন্য। এই আবহে সাময়িক ভাবে শিবসেনা নাম ও প্রতীক বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচন কমিশন। তবে গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশন শিবসেনা বিতর্কের অবসান ঘটান। এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কমিশন জানায়, একনাথ শিন্ডের গোষ্ঠীই হল বালাসাহেবের তৈরি 'আসল' শিবসেনার নেতা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে শিবসেনার বর্তমান সংবিধান অগণতান্ত্রিক। কোনও নির্বাচন ছাড়াই অগণতান্ত্রিকভাবে একটি গোষ্ঠীর লোকদের পদাধিকার বলে নিয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দলের দখল রাখতে নিজের আস্থাভাজনদের নেতা পদে নিয়োগ করেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। তবে নির্বাচন কমিশন সেই নিয়োগকে বেআইনি আখ্যা দেয়। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় এখন সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে উদ্ধবপন্থীরা।