বারো বছরের নীচে কোনও মেয়ের পোশাক খুলে দিলে, তার উপরে শুয়ে পড়লে এবং তার গোপনাঙ্গের মধ্যে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করতে বললে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। এমনই পর্যবেক্ষণ করল ওড়িশা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতি সঙ্গমকুমার সাহু জানিয়েছেন, ওই ধরনের কাজ করলে তা ২০১২ সালের পকসো আইনের ১০ নম্বর ধারার আওতায় 'গুরুতর যৌন হেনস্থা' হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ওই ধারার আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: Murder Case: 'শুধু মহিলা বলেই জামিন পেয়ে যাবেন, এটা হবে না,' খুনের মামলায় জানাল আদালত
‘লাইভ ল’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট, তা ২০১৫ সালে ঘটেছিল। সেইসময় নির্যাতিতার বয়স ছিল পাঁচ। অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছিল, বিকেলে খেলতে গিয়েছিল কিশোরী। মধ্যরাতে খেলার মাঠে তাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন কিশোরীর মা। তারপর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (২) (ক) ধারা এবং পকসো আইনের ছয় নম্বর ধারার আওতায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৮ সালে ওই ব্যক্তিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫,০০০ টাকার জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। জরিমানার অর্থ মেটাতে না পারলে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন অতিরিক্ত নগর দায়রা আদালতের বিচারক।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ওড়িশা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই ব্যক্তি। সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে, পুলিশের কাছে নির্যাতিতা জানিয়েছিল যে তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল ওই ব্যক্তি এবং মুখে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করতে বলেছিল। তারপর তার গোপনাঙ্গে নিজের পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করতে বলেছিল ওই ব্যক্তি।
তবে ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাইকোর্টের মন্তব্য করেছে যে আদালতে নিজের আইনজীবীর প্রশ্নের মুখে সেই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ওই ব্যক্তি যে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ বা শরীরের অন্য কোথাও কিছু প্রবেশ করিয়েছিল, সেরকম কিছু বলা হয়নি আদালতে। নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে যে মুখ স্পর্শ করেছিল বা নির্যাতিতার মুখে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করতে ওই ব্যক্তি জোর করেছিল, সেরকম কিছু জানানো হয়নি। তাই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার আওতায় সেই ঘটনাকে 'ধর্ষণ' হিসেবে চিহ্নিত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। পকসো আইনের তিন নম্বর ধারাও বলবৎ হবে না।
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের রায় সংশোধন করেছে হাইকোর্ট। ১০ বছরের পরিবর্তে ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। যা ওই ধারার আওতায় সর্বোচ্চ সাজা। ওই ব্যক্তি ইতিমধ্যে সাত বছর জেলে কাটিয়ে ফেলেছে।