করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলেছে। তবে সেই কয়েক বছরের ভয়ানক স্মৃতি ভুলে যাননি কেউই। সেই কোভিডের উৎসস্থল হিসেবে চিনকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে প্রথম থেকে। এহেন চিনে কোভিডের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হয়নি। আর এরই মাঝে নতুন এক রহস্যজনক রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে সেই দেশে। মূলত শিশুরাই অসুস্থ হচ্ছে এতে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এই 'অজানা নিউমোনিয়া' ভারতেও ছড়িয়ে পড়বে না তো? এই প্রশ্নের জবাবে বিবৃতি প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হল, আপাতত চিনের 'অজানা নিউমোনিয়া' ভারতে ছড়িয়ে পড়ার কোনও লক্ষ্মণ নেই। এছাড়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সবরকমের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার। আমরা বিষয়টির ওপর নজর রেখে চলেছি।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, 'এখনও পর্যন্ত যে তথ্য হাতে এসেছে, তার ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি, গত কয়েক সপ্তাহে চিনে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বেশি সংখ্যায় দেখা গিয়েছে। কোনও অস্বাভাবিক প্যাথোজেন বা কোনও অপ্রত্যাশিত ক্লিনিকাল ভাইরাল ছড়িয়ে পড়ার কোনও লক্ষ্মণ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।'
রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর চিনে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে একটি রহস্যজনক রোগ। এই রোগের উপসর্গ কতকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। এদিকে আক্রান্ত শিশুদের নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এই 'অজানা নিউমোনিয়া' নিয়ে চিনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে চিনের সরকারকে। এদিকে জানা গিয়েছে, এই রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তেই অনেক স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১২ নভেম্বর একটি সাংবাদিক বৈঠক করে চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন সম্ভবত প্রথমবারের মতো বাড়তে থাকা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিল। বেজিং এবং লিয়াওনিংগে হাসপাতালগুলিতে অজানা নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় উপচে পড়ছে বলে দাবি করেছে তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম।
জানা গিয়েছে, এই অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের জ্বর হচ্ছে, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে কাশি হচ্ছে না আক্রান্ত শিশুদের। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সেভাবে ছড়াচ্ছে না এই রোগ। চিনের শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ গত অক্টোবর থেকেই দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই রোগে এখনও পর্যন্ত কোনও রোগীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসেনি। এদিকে আন্তর্জাতিক সংক্রমণ ও রোগ নজরদারি সংস্থা প্রোমেড গত মঙ্গলবার লাল সতর্কতা জারি করে। এদিকে প্রোমেডের এই সতর্কতা এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত 'অজানা নিউমোনিয়া' রোগটি একই কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চিনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিনের চিকিৎসক এবং গবেষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এদিকে এই অজানা রোগ নিয়ে চিন গোপনীয়তা বজায় রেখেছে এখনও। এই আবহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট তলবের জবাবে বেজিং কী বলেছে তা স্পষ্ট নয়। এর আগে কোভিডকালে চিনের এই গোপনীয়তা বজায় রাখার সভাবের নিন্দা জানানো হয়েছিল বিশ্ব জুড়ে। এবারও চিন সেই পথেই হাঁটছে।