সতেরো দিন পর হিমালয়ের পেট থেকে ‘মুক্তি’ পেলেন ৪১ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টা ৫৩ মিনিট নাগাদ উত্তরকাশীর সেই অভিশপ্ত সুড়ঙ্গ থেকে প্রথম শ্রমিক বেরিয়ে আসেন। ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে বাকি ৪০ জন শ্রমিককেও বের করে নিয়ে আসেন উদ্ধারকারীরা। শেষপর্যন্ত রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে ৪১ শ্রমিকই বেরিয়ে আসেন। তাঁদের তিনজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাও (হুগলির পুরশুড়ার হরিণাখালির জয়দেব প্রামাণিক, পুরশুড়ার শৌভিক পাখিরা এবং কোচবিহারের তুফানগঞ্জের চেকাডোরা গ্রামের মানিক তালুকদার) সুড়ঙ্গের মধ্যেই প্রাথমিকভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। তারপর অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের চিন্যালিসৌরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে ৪১ শয্যার বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: Uttarkashi Tunnel Rescue LIVE: অভিশপ্ত টানেল থেকে বেরিয়ে এলেন ১০ শ্রমিক, বাকিরাও বেরিয়ে আসবেন জলদি
উত্তরকাশীর অভিশপ্ত সুড়ঙ্গের উদ্ধারকাজ
গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশীর নির্মীয়মান সুড়ঙ্গে (স্বপ্নের চারধাম প্রকল্পের সিল্কিয়ারা-বারকোট টানেল) ধস নামে। ৪১ জন শ্রমিক আটকে পড়েন (তিনজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা - হুগলির পুরশুড়ার হরিণাখালির জয়দেব প্রামাণিক, পুরশুড়ার শৌভিক পাখিরা এবং কোচবিহারের তুফানগঞ্জের চেকাডোরা গ্রামের মানিক তালুকদার)। তারপর থেকেই তাঁদের উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু হিমালয়ের পেট থেকে শ্রমিকদের বের করে আনার কাজটা একেবারেই সহজ ছিল না। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের আনা হয়। আসে যন্ত্রপাতি। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলতে থাকে উদ্ধারকাজ। তাঁদের খাবার পাঠানো হতে থাকে। কিন্তু যত সময় যাচ্ছিল, তত বাড়ছিল উদ্বেগ।
তারইমধ্যে ২১ নভেম্বর (গত সপ্তাহের মঙ্গলবার) ভোরে আটকে পড়া শ্রমিক, তাঁদের পরিবার এবং উদ্ধারকারীদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটে। এন্ডোস্কোপিক ফ্লেক্সি ক্যামেরা দিয়ে প্রথমবার শ্রমিকদের দেখা যায়। তখন মনে করা হয়েছিল যে এবার খুব শীঘ্রই শ্রমিকদের উদ্ধার করা হবে। উদ্ধারকারীরাও বলছিলেন যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু না কিছু বাধা আসছিল। সুড়ঙ্গের মধ্যেই ভেঙে যায় অগার মেশিনের একাংশ। থমকে যায় উদ্ধারকাজ।
আর তারপর বিশেষজ্ঞরা হাতে যে শেষ উপায় পড়েছিল, সেই পথেই হাঁটেন তাঁরা। সোমবার থেকে হাত দিয়েই ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে থাকেন উদ্ধারকারীরা। সেজন্য দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয় ‘র্যাট হোল মাইনিং’-র একটি দলকে। যে প্রক্রিয়া কিছুটা বিপজ্জনক হলেও মেঘালয়ের মতো কয়েকটি জায়গায় সেই পদ্ধতিতেই কয়লা সংগ্রহ করা হয়। বিকল্প হিসেবে চলতে থাকে ভার্টিকাল খননও (ভারতীয় সেনা সেই কাজ করতে থাকে)। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ সুড়ঙ্গ খননের কাজ শেষ করা হয়। তারপর শ্রমিকদের বের করে আনার কাজ শুরু করে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)।
‘র্যাট হোল মাইনার’-দের সাফল্য
সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কাজ শুরু করেন ‘র্যাট হোল মাইনার’-রা। ২৪ ঘণ্টার কম সময়েই তাঁরা ১২ মিটার ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলেন। তারপর সেই পাইপ দিয়ে শ্রমিকদের করে নিয়ে আসা হতে থাকে।