বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের প্রতিটি ঘাসই তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। চেনা মাঠে, চেনা পরিবেশে অবশ্য বুধবার অন্য লড়াই কার্লেস কুয়াদ্রাতের। যে বেঙ্গালুরু এফসি-কে সাফল্য দেওয়ার জন্য একটা সময়ে কঠিন থেকে কঠিনতম সব অঙ্কের হিসাব মিলাতেন কুয়াদ্রাত, সেই দলকে হারানোর জন্য এবার স্ট্র্যাটেজি ছকতে হচ্ছে স্প্যানিশ কোচকে।
বুধবার বেঙ্গালুরু এফসি-র ঘরের মাঠে তাদের মুখোমুখি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল। এখনও পর্যন্ত বেঙ্গালুরু আইএসএলের ২টি ম্যাচ খেলে দু'টিতেই হেরেছে। তাই ঘরের মাঠে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে জিততে মরিয়া বেঙ্গালুরু। এদিকে ইস্টবেঙ্গল দু'ম্যাচ খেলে ১টি ড্র করেছে, অন্যটিতে জিতেছে। তারা চাইবে শেষ ম্য়াচে জয় পাওয়ার ধারা বজায় রাখতে। তবে বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠে যে ম্যাচটি সহজ হবে না, সেটা ভালো করেই জানেন কুয়াদ্রাত।
বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন এবং ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান কোচ কুয়াদ্রাত তাই বলেছেন, ‘গত মরশুমে বেঙ্গালুরু ট্রফির অন্যতম দাবিদার ছিল। ওরা ডুরান্ড কাপ জিতেছিল এবং সুপার কাপের ফাইনালেও ওঠে। তার মানে ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। ওরা নতুন খেলোয়াড়দের এনে নতুন করে একটা দুর্দান্ত প্রকল্প শুরু করেছে। তাই বুধবার আমাদের কঠিন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়েই নামতে হবে। দু'টি ম্যাচ হারার পরে ওরা এই ম্যাচে পয়েন্ট তোলার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। ওরা নিজেদের উজাড় করে দেবে।’
আরও পড়ুন: জামশেদপুরকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবলে বড় লাফ, মোহনবাগানের ঘাড়ে উঠে পড়ল কেরালা
২০১৬ থেকে ২০১৮— কোচ হিসাবে ভারতে তাঁর প্রথম পর্বে কুয়াদ্রাত বেঙ্গালুরু এফসি-র সহকারীর পদে ছিলেন। এবং তাদের ফেডারেশন কাপ, প্রথম সুপার কাপ জিততে সাহায্য করেন। সেই সময়ে বেঙ্গালুরু এফসি প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে এএফসি কাপের ফাইনালে উঠেছিল। ২০১৮-তে বেঙ্গালুরুর প্রধান কোচ হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। প্রথম মরশুমেই (২০১৮-১৯) দলকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। তাঁরই প্রশিক্ষণে বেঙ্গালুরু একই মরশুমে লিগসেরা হয়ে এবং ট্রফিও জেতে। তাই কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে এবার বেঙ্গালুরুর পতনের হিসাবটা ছকতে হচ্ছে কুয়াদ্রাতকে।
নস্ট্যালজিক স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘এখানকার সমর্থকেরা দুর্দান্ত। দলের জন্য সব সময়ে গলা ফাটায়। ওরা দলকে অনেক সাহায্য করে। সব ম্যাচই খুব কম ব্যবধানে নিষ্পত্তি হচ্ছে। যারা প্রথমে গোল করে এগিয়ে যাবে, তারা এই ম্যাচে অনেক সুবিধা পাবে। দুই দলই ভালো এবং ধারাবাহিক। যে কেউ জিততে পারে।’
গত তিন মরশুমে ব্যর্থতার পরে এবার লাল-হলুদ সমর্থকদের আশার আলো দেখাচ্ছেন কুয়াদ্রাত। আইএসএলে শুরুতেই অপরাজিত রয়েছে তারা, এমন এর আগের তিন মরশুমে কখনও ঘটেনি। কুয়াদ্রাতও আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘আমি অনেক ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছি। আমরা একটা ভালো প্রকল্প খুব সুন্দর ভাবে শুরু করেছি। আমাদের তিন জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলবে। আমাদের নতুন খেলোয়াড় হিজাজি মাহের ওর দেশের (জর্ডন) জার্সি গায়ে খেলে। আমাদের গিল অনূর্ধ্ব ২৩ দলে এবং আরও তিন জন অনূর্ধ্ব ১৭ দলে খেলে। ক্লাব একেবারে ঠিক দিকে যাচ্ছে। আমাদের এখন ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। এই লিগে অনেক শক্তিশালী দল রয়েছে। সে জন্য আমাদের উপর চাপও অনেক বেশি।’
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে বেঙ্গালুরু পাবে না নওরেম রোশন সিং এবং সুরেশ সিংকে। তাঁরা নির্বাসিত। ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সেটা সুবিধার কি না এই প্রশ্নের জবাবে কুয়াদ্রাত বলেছেন, ‘একদমই নয়। কোনও ফুটবলারের বদলে আর একজনকে খেলালে তার সামনে সুযোগ এসে যায় নিজেকে প্রমাণ করার। আমরা তো ১১ জনের বিরুদ্ধে ১১ জন খেলি। ওরা দু'টি ম্যাচে হেরেছে। কিন্তু নিজেদের সমর্থকদের সামনে প্রমাণ করার তাগিদও রয়েছে। তাই নিজেদের সেরাটা দিতেই ওরা নামবে।’
শুধু কুয়াদ্রাতই নয়, ক্লেটন সিলভাও বেঙ্গালুরুর প্রাক্তনী। তিনিও প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য নস্ট্যালজিক হয়ে থাকবে। তবে ক্লেটন যে রকম ছন্দে রয়েছে, তাতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা। বেঙ্গালুরুর দুই প্রাক্তনী কি জুটি বেধে এবার তাদের বিরুদ্ধেই বাজিমাত করবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।