বাঙালির ফুটবল আবেগকে সামনে রেখে 'অ্যাটাকিং' খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু নড়বড়ে 'ডিফেন্স' নিয়ে অতিরিক্ত 'অ্যাটাকিং' হওয়ার গুঁতোয় 'সেমসাইড' গোল করে বসল বঙ্গ বিজেপি। মোহনবাগানের নামের সঙ্গে জুড়ে দিল ‘এটিকে’। ভুল আঁকল ইস্টবেঙ্গলের লোগো। শুধু তাই নয়, যাঁরা সেই প্রচারের ভিডিয়োয় মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক হিসেবে অভিনয় করেছেন, তাঁদের মুখে কলকাতার দুই বড় দলের নামের উচ্চারণ শুনেও ভিরমি খেয়ে গেলেন নেটিজেনরা। চূড়ান্ত বিরক্তির সঙ্গে নেটিজেনদের একাংশ বললেন, ‘বাংলার ফুটবলকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা বন্ধ করুন। তার থেকেও বড় কথা, আমাদের দুটো ক্লাবের লোগো আর নাম নিজেদের মতো চালিয়ে দিতে পারেন না আপনারা।’ সেইসঙ্গে অভিনেতাদের মুখে ‘মোহনবাগান’ এবং ‘ইস্টবেঙ্গল’-র উচ্চারণ শুনে রীতিমতো চটে গিয়ে কেউ-কেউ বললেন, ‘ঠিক করে বাংলা উচ্চারণ করতে পারে না, সেরকম লোকেদের দিয়ে অ্যাড করিয়ে ভোট পাবে ভাবছে বিজেপি।’ সেইসব মন্তব্যের জেরে এমনই পরিস্থিতি হল যে এক্স থেকে বিতর্কিত প্রচারের ভিডিয়ো মুছে দিয়েছে বিজেপি। তবে ফেসবুকে এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই ভিডিয়ো।
বিজেপির ভিডিয়োয় ঠিক কী ছিল?
গত ৬ মে বঙ্গ বিজেপির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে যে 'এটিকে মোহনবাগান' লেখা লোগোর সামনে সবুজ-মেরুন জার্সি পরে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। আর 'ইস্টবেঙ্গল' লেখা একটি লোগোর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন লাল-হলুদ জার্সি পরা একজন। সবুজ-মেরুন জার্সি পরা ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, 'ক্লাবের সেরা বাঙালি, তুমি মোহনবাগান।'
তারপরই লাল-হলুদ জার্সি পরা যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘এ!! রাখ তোর রঙের বালতি। ক্লাবের রং লাল-হলুদ হবে। ইস্টবেঙ্গল ইজ বেস্ট ইন বেঙ্গল।’ পালটা সবুজ-মেরুন জার্সি পরিহিত যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘যা, যা, শিরায়-শিরায় রক্ত। বাঙালি মোহনবাগানের ভক্ত।’ পালটা উত্তর আসে, ‘এ!! এ!! এ!! খোকা। লাল-হলুদ সেরার সেরা। তুই না একটু চেপে দাঁড়া।’
তারপরই সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ জার্সি পরা দু'জন যুবককে একে অপরের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। তখন একজন উঠে থামাতে যান। সেই মধ্যস্থতাকারী বলেন, 'আগে বল, ভোট কাকে দিবি?' তখন সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ জার্সি পরা দু'জন যুবকই বলে ওঠেন মোদীকে। তাতেই তাঁরা হাত মেলাতে থাকেন। হয়ে যায় ‘হ্যাপি এন্ডিং’।
ফুটবলপ্রেমী বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া
কিন্তু বঙ্গ বিজেপির জন্য সেটা একেবারেই ‘হ্যাপি এন্ডিং’ হয়নি। বরং মোহনবাগানের সঙ্গে এটিকে জুড়ে দেওয়ায় এবং ইস্টবেঙ্গলের লোগো ভুলভাল আঁকায় চটে লাল হয়ে যান ফুটবলপ্রেমী বাঙালিদের একাংশ। সেইসঙ্গে ওই প্রচার ভিডিয়োয় থাকা যুবকরা যে কায়দায় মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের নাম উচ্চারণ করেন, তাতেও বিরক্ত হন তাঁরা।
এক নেটিজেন বলেন, ‘এরা যে বহিরাগত বোঝা যায়। এখনও পর্যন্ত কোনও দলের সাহস হয়নি বাঙালির ফুটবল নিয়ে রাজনীতি করতে।’ অপর একজন বলেন, ‘আগে ভালো করে বাংলা বলতে শিখুন। দুর্গাপুজোয় মাছ-মাংস খেতে শিখুন। তারপর এখানে ভোট চাইতে আসবেন। আর বাঙালির আবেগকে এভাবে রাজনীতির জায়গায় আনার সাহস কী করে হয় আপনাদের। এটা আবেগ, রাজনীতির স্বার্থে এই আবেগ ব্যবহার হলে এখানে সিট তো দূরের কথা, আপনাদের দলকেই আমরা দুই দলের সমর্থকরা মিলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে দেব। তাই সাবধান।’
বিষয়টি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থক তথা ইনফ্লুয়েন্সার সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘নির্লজ্জের মতো পোস্ট একদম। এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি বাঙালিদের সিরিয়াসলি নেয় না। অবাঙালিদের দিয়ে অ্যাড করিয়েছে। ওরা বাংলা-বাঙালির আবেগ বোঝে না। এই অ্যাডে প্রত্যেক বাঙালি বিক্ষুব্ধ, সেটা তৃণমূলের সমর্থক হোক বা সিপিআইএমের সমর্থক হোক। অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত বিজেপির। বাংলার ভাবাবেগ নিয়ে খেলছে। ওদের দলে অনেক বাঙালি আছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অবাঙালিদের দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে।’