প্রথমে সাপ, তার পরে ফ্লাড লাইট। গুয়াহাটিতে বারবার বিঘ্ন ঘটল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে। যার জেরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লজ্জার মুখে পড়তে হল গুয়াহাটিকে। প্রথমে ভারতের ইনিংস চলাকালীন মাঠের মধ্যে সাপ ঢুকে পড়ায় খেলা বন্ধ করতে হয়। আর প্রোটিয়াদের ইনিংস চলার সময়ে আবার ফ্লাডলাইট বন্ধ হয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের তৃতীয় ওভার চলাকানীন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় মাঠের ফ্লাডলাইট। বেশি কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হয় ম্যাচ। এর পর ধীরে ধীরে আলো এলে ফের শুরু হয় খেলা। ২ ওভার ১ বল করার পরেই আলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাপ ঢোকা এবং ফ্লাডলাইটের আল নেভা মিলিয়ে দু’দফায় প্রায় ২৩ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা।
খেলার মাঠে ফ্লাড লাইট নিভে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এমনটা প্রায় সময়েই ঘটে থাকে। এর আগেও বহুবার এমন দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছেন দর্শকরা ৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের কোনও ক্রিকেট ম্যাচের মাঝে মাঠে কুকুর, বিড়াল নয়, একেবারে সাপ ঢুকে পড়ার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন সকলেই।
আরও পড়ুন: রাহুল-রোহিত ঝড় থামাতেই মাঠে ঢুকল দু'টি সাপ! অবাক হর্ষ ভোগলে
টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারই ভারতের ভিত শক্ত করে দেন। প্রথম উইকেটে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে রোহিত-রাহুল জুটি। ২৮ বলে ঝড়ো ৫৭ রান করেন রাহুল। কেএল রাহুলের কিছু আগেই ৩৭ বলে ৪৩ করে আউট হন রোহিত শর্মাও। ভারতের দুই ওপেনারকেই ফেরান কেশব মহারাজ। ভারতের দুই ওপেনার আউট হলেও ভারতের রানের গতি কিন্তু থামেনি। বরং বেড়েছে। কারণ তার পরেই শুরু হয় সূর্যকুমার যাদবের সাইক্লোন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন বিরাট কোহলি। যার জেরে ২০০ রানের গণ্ডি টপকে যায় ভারত।
সূর্য অবশ্য তবে ২২ বলে ৬১ করে রান আউট হয়ে যান। তবে ইনিংস শেষ করে মাঠ ছাড়েন বিরাট কোহলি। ২৮ বলে অপরাজিত ৪৯ করেন বিরাট। আর ৭ বলে ঝড়ো ১৭ করে অপরাজিত থাকেন দীনেশ কার্তিক। যার জেরে ভারত এ দিন টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোর করে। ভারত এ দিন ৩ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রানের বিশাল স্কোর করে।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই প্রোটিয়া ব্রিগেডকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন আর্শদীপ সিং। তবে বিধ্বংসী মেজাজে ডেভিড মিলার সব হিসেবই উল্টে দিচ্ছিলেন। কানের কাছ ঘেষে বেরিয়ে গিয়েছে ভারত। এ দিন দুরন্ত সেঞ্চুরি হাঁকান মিলার। একা হাতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দু'শোর গণ্ডি পার করান তিনি। কিন্তু তাঁর শতরানেও হার আটকাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। কারণ নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২১ রানেই শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ২১ রানে ম্যাচ জিতে ইতিহাস লেখে ভারত। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ জিতে গেলেন রোহিত শর্মারা।
আরও পড়ুন: ১৮ বলে ঝড়ো অর্ধশতরান, কেএল-কে ছুঁলেন সূর্য, সঙ্গে রাহুলের অন্য নজির ভাঙলেন আধঘণ্টায়
আর্শদীপ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতেই এসেই তেম্বা বাভুমা (৭ বলে ০) এবং রিলি রোসোউকে (২ বলে ০) প্যাভিলিয়নে পাঠান। এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে চাপে ফেলে দেন প্রোটিয়াদের। তবে ওপেন করতে নেমে হাল ধরেছিলেন কুইন্টন ডি'কক। তিনি এবং চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা এডেন মার্করাম দুরন্ত ছন্দে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯ বলে ৩৩ করে মার্করামও আউট হলে, ফের ধাক্কা খায় প্রোটিয়া ব্রিগেড। এর পর পাঁচে ব্যাট করতে আসেন ডেভিড মিলার।
গুয়াহাটিতে এ দিন ভারতীয় সমর্থকেরাও মিলার ঝড়ের সাক্ষী থাকতে পেরে অভিভূত। প্রত্যেকেই উপভোগ করলেন ডেভিড মিলারের চোখ ধাঁধানো অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংসটিকে। ঝড়ের গতিতে ব্যাট করে প্রোটিয়াদের প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন মিলার। অল্পের জন্য ফস্কে গেল লক্ষ্য। উল্টেদিকে উইকেট আঁকড়ে দর্শক হয়ে মিলারের ইনিংস উপভোগ করলেন কুইন্টন ডি'কক। ৪৭ বলে ঝড়ো ১০৬ রান করে অপরাজিত থাকেন মিলার। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ৮টি চার এবং ৭টি ছক্কা। স্ট্রাইকরেট ২২৫.৫৩। ডি'কক আবার ৪৮ বলে ৬৯ করে অপরাজিত থাকেন। এত লড়াইয়েরও পরেও ১৬ রানে ম্যাচ হারতে হল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
তবে মিলার যেমন ঝড় তুলেছিলেন, তাতে ভারত যদি ২৩৭ রানের বড় ইনিংস না করত, তবে তাদের কপালে দুঃখ ছিল। ভারতের আর্শদীপের ২ উইকেট ছাড়াও অক্ষর প্যাটেল ১টি উইকেট নিয়েছেন। তবে ভারত জিতলেও মিলার যে ভাবে বোলারদের ছাতু করেছে, সেটা কিন্তু আখেরে টি-টোয়েন্টি বি চিন্তায় রাখবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।