টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব স্বেচ্ছায় তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওয়ানডের ক্ষেত্রে ঘটল ঠিক উল্টোটা। তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে একেবারে ঘাড় ধরেই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বিরাট কোহলিকে। তাঁর বদলে রোহিত শর্মাকে নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ রকমটা যে ঘটতে চলেছে, সেটা আগে থেকেই অনুমান করা হয়েছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রুপ পাবে, সেটা বোধহয় কেউ কল্পনা করতে পারেননি।
পরিসংখ্যান বলছে, কোহলি নেতৃত্বে ৯৫টি ম্যাচ খেলে ৬৫টিতে জিতেছে ভারত। ২৭টি ম্যাচে হেরেছে। শতকরা ৭০ শতাংশেরও বেশি ম্যাচ জিতেছেন অধিনায়ক কোহলি। যে সাফল্য কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো বিশ্বজয়ী অধিনায়কের থেকেও বেশি। বিশ্বকাপে সফল না হলেও ১৯টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মধ্যে ১৫টি জিতেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অধিনায়ক থাকাকালীন ২১টি সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট। ব্যাটিং গড় ৭২.৬৫। এ হেন সাফল্যের পরেও কোহলিকে যে ভাবে একদিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, সেটা মানতে পারছেন না অনেকেই। বিরাটকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর পিছনে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। তবে বিরাট কোহলি নিজেই কার্যত নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছেন।
১) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই জল্পনা চলছিল, পারফরম্যান্স ভাল না হলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকেই অধিনায়কত্ব যাবে বিরাটের। ঘটলও সেটা।
২) সাম্প্রতিক কালে সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স আহামরি নয়। বড় কোনও টুর্নামেন্ট বিশেষত আইসিসি-র কোনও টুর্নামেন্টে সাফল্য পাননি কোহলি। তাই এ বার রোহিতের উপরই ভরসা রাখতে চলেছে বোর্ড।
৩) বর্তমান বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কোহলির সম্পর্ক যে তেমন ভাল নয়, সেটা অনেকদিন আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ ভাবে যে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হবে, সেটা হয়তো ভাবতেই পারেননি টিম ইন্ডিয়ার পোস্টার বয়।
৪) কোহলির স্বেচ্ছাচারিতাটাও একটা বড় কারণ। ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না খেলানোটা মোটেও ভালো ভাবে নেননি বোর্ড কর্তারা। কোহলিকে একেবারে তাই সরিয়ে না দিয়ে, একটু একটু করে তাঁর ক্ষমতা কেড়ে নিল বোর্ড। দু'টি ফর্ম্যাটের নেতৃত্ব তাঁর থেকে কেড়ে নিয়ে তাঁকে কিন্তু সতর্ক করল বোর্ড।
৫) ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। কোহলির পছন্দের এবং অপছন্দের কারা, সেই বিভাজনটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। মোদ্দা কথা, কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে বিভাজন নীতি মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, সব প্লেয়ারদের কাছে কোহলির গ্রহণযোগ্যতা সমান ছিল না। এবং তাঁর কাছে কোনও সমস্যা নিয়ে প্রয়োজনে প্লেয়াররা পোঁছতেও পারতেন না। সতীর্থদের সঙ্গে সব সময়ে একটা বড় দূরত্ব রেখে চলতেন কোহলি।
৬) কোহলি'র নেতৃত্বে একাধিক এমন ঘটনা রয়েছে যেখানে ক্রিকেটাররা দু'টি ম্যাচে ব্যর্থ হলেই দলে নিজেদের জায়গা পাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। তাঁরা কার্যত ভয়ে ভয়ে থেকে পারফর্ম করতেন। যার ফলে খোলা মনে না খেলতে পারার ফলে সব সময় সেরাটা দেওয়া সম্ভবও হতো না। কোহলির নেতৃত্বে এ রকম বড় উদাহরণ হল কুলদীপ যাদব। দুরন্ত প্রতিভা থাকার পরেও কুলদীপ নিজেও বুঝতে পারেননি, তাঁর ভুলটা কোথায় ছিল। শুধু একা কুলদীপ নন, এ রকম বহু ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁরা জানেনই না তাঁদের আসলে দলের মধ্যে ভূমিকাটা কী!
৭) বিরাটের স্বেচ্ছাচারিতার পাশেই রোহিত শর্মা আবার জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াতেন সব সময়ে। প্রয়োজনে বাইরে ঘুরতে যেতেন বা হোটেলে গিয়ে এক সঙ্গে ডিনার করতেন। ব্যর্থ হলে আশ্বস্ত করতেন। রোহিতকে অধিনায়ক বাছার পিছনে এটা অন্যতম বড় কারণ।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।