কামিন্স,স্টার্ক,হ্যাজেলউডদের একের পর এক বল তখন আছড়ে পড়ছে পূজারার গায়ে,মাথায় পিঠে,বুকে। চোটে কেঁপে উঠছে গোটা শরীর। সারা ভারতের উদ্বিগ্ন চোখ তখন ব্রিসবেনে। দুঃশ্চিন্তায় ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় তখন সকলের। কিন্তু চেতেশ্বর পূজারা যেন 'আয়রন ম্যান'। চোট উপেক্ষা করে পরের বলটাই খেলে ফেলেছেন একেবারে ব্যাটের মাঝখান দিয়ে। যেন আগের বলে কিছুই ঘটেনি। ১৪ বার একের পর এক বলের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে ভারতকে রক্ষা করেছেন তিনি। এমন একটা সময় তিনি বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন যেখানে ভারতের উইকেট হারালে ম্যাচ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারত।
২০১৮ সালে যখন ভারত প্রথমবার ৭ দশক পরে অজিভূমে টেস্ট সিরাজ জিতেছিল সেইসময় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব্যাট হাতে পালন করেছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। সেই সিরিজে প্রায় ১১০০ এর বেশি বল খেলে ৫২১ রান করেছিলেন পূজারা। গোটা সিরিজ জুড়ে প্রায় ৩১ ঘন্টার অদম্য লড়াই চালিয়েও একটুও ক্লান্তি হননি তিনি। তিনি ক্রিজে এলেই বাড়ত অজি বোলারদের চিন্তার ভাঁজ।
সেই পূজারা যে দু'বছর বাদেও ব্যাট হাতে একটুও বদলাননি তা হারে হারে টের পেল অজিরা। সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে বারবার সমালোচিত হয়েছে তাঁর ধীরগতির ব্যাটিং। কিন্তু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট বারবার তার পাশে দাঁড়িয়েছে। অধিনায়ক রাহানে জানতেন পূজারা হচ্ছে দলের সেই হিরে যাঁকে চিনতে ভুল করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। রাহানের সেই বিশ্বাসকে প্রতি ইনিংসে সম্মান জানিয়েছেন পূজারা। সিরিজে করেছেন মাত্র দুটি অর্ধশতরান। তবে ক্রিজে কাটিয়েছেন ২২ ঘন্টার ও বেশি সময়।
ব্রিসবেন টেস্টে তো নয়া ইতিহাস গঠন করল। পঞ্চম দিনে সকালে যখন স্টার্ক,কামিন্স, হ্যাজেলউডরা আগুন ঝরাচ্ছেন তখন বুক চিতিয়ে লড়াই চালালেন তিনি। ২১১ বল খেলে ৫৬ রান করা তার ইনিংসটা কোন অংশে শতরানের থেকে কম নয়। একের পর এক বল আছড়ে পড়েছে তার মাথায়,বুকে,হাতে। ছিটকে গিয়েছে হেলমেট। আঙুলের চোটে কাতরেছেন। আবার দাঁড়িয়ে উঠেই পরের বলটা খেলেছেন একদম ব্যাটের মাঝখান দিয়ে। গিল,পন্তদের মতন নবীন তারকাকে সঠিক পথে চালনা করেছেন নন স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে। তাই বেলাশেষে ভারতের বর্ডার - গাভাস্কার ট্রফি নিজেদের দখলে রাখার অন্যতম কারিগরের আখ্যা পূজারাকেও দিলেও অত্যুক্তি হবে না।
পূজারার দুই বছরের ছোট্ট মেয়েও তার বাবার লড়াই চাক্ষুষ করছিলেন টিভিতে বসে। বাবা চোট পেয়ে যখন মাটিতে বসে পড়ছিলেন। যখন তাঁর চিকিৎসা চলছিল তখন ছোট্ট মেয়ে অদিতির উপলব্ধি মন ভরিয়ে দেবে সবার। চোখ হয়ে উঠতে পারে সিক্ত। চেতেশ্বরের চোট পাওয়া দেখে ছোট্ট অদিতির উপলব্ধি 'বাবা যখন দেশে ফিরে আসবে আমি বাবার ব্যথার জায়গায় কিস করে দেব। তাহলেই বাবার সব ব্যথা-বেদনা দূর হয়ে যাবে।'
অবশেষে আজ অজিভূম থেকে দেশে ফিরেছেন পূজারা। কয়েকদিন থাকতে পারবেন পরিবারের সঙ্গে। খেলতে পারবেন তাঁর বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে। তারপর ফের বাবল জীবন ইংল্যান্ড সিরিজের আগে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।