জীবনের পিচে ৫২ তেই বোল্ড কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন Updated: 04 Mar 2022, 09:10 PM IST Rishav Roy বল হাতে ক্রিকেট ময়দানে জাদু দেখাতেন, আচ্ছা আচ্ছা ব্য়াটার তাঁর ভেল্কিতে কুপোকাত হতেন। তবে মৃত্যুকে বোকা বানিয়ে বোল্ড করতে পারলেন না শেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সেই সম্ভাব্য হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, থাইল্যান্ডে নিজের বাংলোয় মারা যান ওয়ার্ন। সর্বকালের সেরা বল থেকে, ড্রাগ বিতর্ক, মহিলাসঙ্গ, ওয়ার্নের জীবনযাপনের ছিল বর্ণময়। কিংবদন্তির মৃত্যুর দিনে জেনে নিন তাঁর ঐতিহাসিক জীবনের কাহিনি। 1/11 ১৯৬৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা শেন ওয়ার্ন শুরু থেকেই খেলাধুলোয় দুরন্ত ছিলেন। ক্রিকেট তো বটেই একেবারে টিনএজে অল্পস্বল্প ফুটবলও খেলেন ওয়ার্ন। শেষমেশ ১৯৯১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভিক্টোরিয়ার হয়ে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজের প্রথম শ্রেণীর অভিষেক ঘটান ওয়ার্ন। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ দলের হয়ে জিম্বাবোয়ে সফরেও যান তিনি। তারপর ডিসেম্বরে মেলে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সুযোগ। 2/11 ‘এ’ দলের হয়ে খেলার এক মাসের মধ্যেই ১৯৯২ সালে ২ জানুয়ারিতে সিডনির ময়দানে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জার্সিতে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। প্রতিপক্ষ ছিল ভারতীয় দল। ম্যাচে ১৫০ রান খরচ করে একমাত্র একটিই উইকেট পেয়েছিলেন ওয়ার্ন। তাঁর প্রথম উইকেট ছিলেন সেই ম্যাচের সেরা রবি শাস্ত্রী। সেই বোলারই যে পরবর্তী প্রায় দুই দশক ধরে নিজের স্পিনের জালে সকলকে মোহিত করে রাখবে, তা হয়তো কেউই বুঝতে পারেননি। 3/11 অভিষেক ঘটানোর পরের বছরেই এক বলই ইতিহাসের পাতায় ওয়ার্নকে চিরস্মরণীয় করে দেয়। ১৯৯৩ সালের অ্যাসেজ সফরে, নিজের প্রথম বলেই মাইক গ্যাটিংয়ের উইকেট ছিটকে দেন ওয়ার্ন। লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়া সেই বল গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিল। এই বলকেই শতাব্দীর সেরা বল আখ্যা দেওয়া, যা নিয়ে প্রায় তিন দশক পরে আজও চর্চা অব্যাহত। 4/11 তবে ক্রিকেট মাঠে বল হাতে দাপট দেখানো ওয়ার্ন, মাঠের বাইরেও সর্বদাই নানা বিতর্কের জেরে চর্চায় থাকতেন। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিজের ওজন কমানোর জন্য ওয়ার্ন এক নিষিদ্ধ ওষুধ নিয়ে ধরা পড়ে যান। তিনি তাঁর মায়ের ওপর সেই দোষ চাপালেও ১২ মাসের জন্য তাঁকে নির্বাসিত হতে হয়। তারপর আর কোনোদিনও জাতীয় দলের হয়ে ওয়ান ডে খেলেননি ওয়ার্ন। 5/11 নির্বাসিত হওয়ার পর ওয়ান ডে ক্রিকেট না খেললেও টেস্টে ফেরেন ওয়ার্ন। ২০০৫ সালের বিখ্যাত অ্যাসেজ সিরিজে ওল্ড ট্রাফোর্ডে তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড ওপনার মার্কাস ট্রেসকোথিককে আউট করে প্রথম বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মালিক হন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার তরফে সিরিজ সেরাও ঘোষণা করা হয় তাঁকে। 6/11 মহিলা মহলেও শেন ওয়ার্ন বরাবরই বেশ বিখ্যাত ছিলেন। অবাধ পার্টি করা থেকে মদ্যপান, ওয়ার্ন ক্রিকেটের বাইরে নিজের জীবনে কোন কিছুতেই সংযমী ছিলেন। তাঁর এই অবাধ্য জীবনযাপনের ক্ষতিপূরণও তাঁকে দিতে হয়। ওয়ার্নের তিন সন্তানের মা সিমোনের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২০১০ সালে ব্রিটিশ মজেল লিজ হার্টলের সঙ্গে বাগদান পর্ব সারলেও, তিন বছর পর তাও ভেঙে যায়। 7/11 ২০০৭ সালের অ্যাসেজ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৫-০ পরাস্ত করার পর গ্লেন ম্যাকগ্রা, জাস্টিন ল্যাঙ্গার এবং ড্যামিয়েন মার্টিনের সঙ্গে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আলবিদা জানান ওয়ার্ন। ১৪৫ টেস্ট ও ১৯৪ ওয়ান ডেতে যথাক্রমে ৭০৮ ও ২৯৩টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতেও টেস্টে ৩১৫৪ রান এবং ওয়ান ডেতে ১০১৮ রান রয়েছে তাঁর। অবসরের সময়ে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটসংগ্রাহক। অবশ্য ওই বছরেরই শেষের দিকে মুথাইয়া মুরলিধরন তাঁকে টপকে যান। 8/11 তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএল মরশুমে সকলকে চমকে দিয়ে দলের অধিনায়ক তথা কোচ হিসাবে রাজস্থান রয়্যালসকে আইপিএল খেতাব জেতান ওয়ার্ন। আজ পর্যন্ত রাজস্থান আর কোনো আইপিএল ট্রফি জিততে পারেনি। 9/11 বিগ ব্য়াশ লিগে মেলবোর্ন স্টার্সের হয়েও কিছু ম্যাচ খেলেন এবং তাদের নেতৃত্বও দেন ওয়ার্ন। তবে ২০১৩ সালে স্টার্সের হয়ে খেলা চিরতরে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। 10/11 ২০১৩ সালেই শেন ওয়ার্নকে ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি তাঁদের ‘হল অফ ফেমে’ জায়গা করে দেয়। 11/11 সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ার্ন আইপিএল হোক, বিশ্বকাপ হোক বা অ্যাসেজ, বিভিন্ন সিরিজে ধারাভাষ্যকার তথা বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজের মতামত দিতেন। তবে গত মরশুমে করোনার কারণে দ্য হান্ড্রেডে কোচিং করাতে না পারলেও, আসন্ন সময়ে কোচিং রোল নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলেন ওয়ার্ন। কিন্তু হঠাৎ করেই সবটা থেমে গেল।