বিজয়া দশমীর দিনে নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন শুভ মনে করা হয়। সেদিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো ও এই পাখি দেখা যাওয়াকে অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। প্রচলিত রয়েছে যে এই পাখির দেখা পেলে ধনধান্যে বৃদ্ধি হয়। আবার এর ফলে বাড়িতে শুভ কার্য লেগেই থাকে। নীলকণ্ঠ পাখি দেখা নিয়ে একাধিক ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
'যাও উড়ে নীলকণ্ঠ পাখি, যাও সেই কৈলাসে,
দাও গো সংবাদ তুমি, উমা বুঝি ওই আসে।'--
একটি ধারণা অনুযায়ী, ন'দিন মর্ত্যে কাটিয়ে দশমীর দিনে কৈলাসে গমন করেন দেবী দুর্গা। তখন নীলকণ্ঠ পাখিই মহাদেবকে উমার আগমন বার্তা পৌঁছে দিয়ে আসে।
দশমীর দিন দুটি নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। প্রথমটি মণ্ডপ থেকে দেবী দুর্গার যাত্রা শুরু হওয়ার সময় ও অপরটি দেবী দুর্গার নিরঞ্জনের পর।
অপর একটি প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীলকণ্ঠ পাখির দর্শনের পরই রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেন রামচন্দ্র।
লঙ্কাজয়ের পর রামের ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ লাগে। এরপর লক্ষ্মণের সঙ্গে মিলে রাম শিবের আরাধনা করেন ও ব্রাহ্মণ হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হন। সে সময় শিব নীলকণ্ঠ পাখির রূপ ধারণ করে মর্ত্যে এসেছিলেন।
নীলকণ্ঠ অর্থাৎ, যার গলা নীল। সমুদ্র মন্থনের সময় নির্গত হলাহল পান করেছিলেন শিব। সেই বিষকে নিজের কণ্ঠে ধারণ করার ফলে, জ্বালায় মহাদেবের কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়ে যায়। তাই শিবের আর এক নাম নীলকণ্ঠ। নীলকণ্ঠকে পৃথিবীতে শিবের প্রতিনিধি ও স্বরূপ, দুই-ই মনে করা হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, নীলকণ্ঠ রূপ ধারণ করেই শিব মর্ত্যে বিচরণ করেন।
নীলকণ্ঠ পাখিকে আবার কৃষকমিত্রও বলা হয়। খেত-খামারে ফসলে লেগে থাকা কীট খেয়ে কৃষকদের সহায়তা করে নীলকণ্ঠ পাখি।
উল্লেখ্য, এককালে বনেদি ও জমিদার পরিবারে দুর্গাপুজোর পর এই পাখি ওড়ানোর রীতি প্রচলিত ছিল। তবে বর্তমানে পাখি ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায়, সেই রীতি পালন সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে অনেকেই নীলকণ্ঠ পাখি আঁকা ফানুস উড়িয়ে থাকেন।