আজ শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সোমবার। একই দিনে পড়েছে সোমবতী অমাবস্যা। অমাবস্যার দিনে রাহুর প্রাধান্য বেশি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে এই দিনে স্তোত্র পাঠ করলে রাহুর খারাপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি এটি রাহুর দোষ থেকে মুক্তি দেয় এবং নেতিবাচক শক্তিও দূর করে। জেনে নিন সোমবতী অমাবস্যার গল্প। উপবাস রেখে এই গল্পটি পাঠ করলে বা শুনলে পূণ্য লাভ হয় বলে বিশ্বাস।
সোমবতী অমাবস্যার কাহিনি
স্বামী, স্ত্রী ও কন্যা একটি ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল। মেয়েটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়েটির মধ্যে সব গুণই গড়ে উঠছিল। মেয়েটি ছিল সুন্দরী, সংস্কৃতিমনা এবং গুণী, কিন্তু গরিব হওয়ার কারণে বিয়ে হয়নি। একদিন এক সন্ন্যাসী ব্রাহ্মণের বাড়িতে এলেন, তিনি মেয়েটির সেবায় খুব খুশি হলেন। মেয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে সন্ন্যাসী বললেন, মেয়ের হাতের তালুতে কোনও বিবাহযোগ্য রেখা নেই।
মেয়েটির বাবা-মা ঋষিকে জিজ্ঞাসা করলেন, এর কি সমাধান করা উচিত যাতে তার বিয়ে সম্ভব হয়। সন্ন্যাসী জানালেন যে, এক গ্রামে সোনা নামে এক ধোপা মহিলা তার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে থাকেন। তিনি তাঁর স্বামীর প্রতি অত্যন্ত দায়িত্ববান। যদি এই মেয়েটি তাঁর সেবা করে এবং সেই মহিলা তাকে নিজের চাহিদার সিঁদুর থেকে এখটু দেন, তাহলে এই মেয়েটির বিয়ে হবে।
ঋষি আরও বললেন যে মহিলাটি কোথাও আসা-যাওয়া করে না। একথা শুনে ব্রাহ্মণ তার মেয়েকে সেবা করতে পাঠালেন। মেয়েটি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সোনা ধোবিনের বাড়িতে যেত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সব কাজ করে বাড়ি ফিরে যেত। সোনা ধোবিন তার পুত্রবধূকে জিজ্ঞেস করে যে তুমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সব কাজ করো, এটা জানতাম না। পুত্রবধূ বলল ‘মা, আমি ভেবেছিলাম তুমি সকালে ঘুম থেকে উঠে সব কাজ নিজেই শেষ করো। আমি দেরি করে ঘুম থেকে উঠি।’ এ নিয়ে শাশুড়ি ও পুত্রবধূ দুজনেই নজরদারি করতে লাগলেন যে ভোরবেলা ঘরের সব কাজ সেরে কে চলে যায়।
অনেক দিন পর তারা দেখল একটি মেয়ে অন্ধকার ঘরে আসে এবং সব কাজ সেরে চলে যায়। সে চলে যেতে শুরু করলে সোনা ধোবিন তার পায়ের কাছে পড়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে এবং কেন তুমি এভাবে গোপনে আমার বাড়িতে কাজ করো। তারপর মেয়েটি সন্ন্যাসীর বলা সব কথা বলল। সোনা ধোপা মহিলা তার স্বামীর প্রতি অনুগত ছিলেন। সোনা ধোবিনের স্বামী একটু অসুস্থ ছিলেন। তিনি তার পুত্রবধূকে বাড়িতে থাকতে বলেন।
মেয়ের চাহিদা মতো সোনা ধোবিন তার সিঁদুর লাগানোর মেয়েটিকে দেওযার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্বামী মারা যান। তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পথের কোথাও পিপল গাছ পেলে ভাঁওয়ারী দিয়ে প্রদক্ষিণ করে জল নেবেন ভেবে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সেদিন ছিল হরিয়ালি অমাবস্যা। ব্রাহ্মণের বাড়িতে যে থালা পাওয়া যায়, তার পরিবর্তে তিনি ১০৮ বার ইটের টুকরো দিয়ে ঘূর্ণায়মান করে ১০৮ বার পিপল গাছের চারপাশে ঘুরে জল নেন। এই কাজ করতেই স্বামীর মৃতদেহ কাঁপতে থাকে। এভাবে ধোপা স্বামী জীবিত হয়ে গেল। এই থেকেই দিনটি পালিত হচ্ছে।