শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য শুক্ল যজুর্বেদের রুদ্রাষ্টাধ্যায়ী মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে শিবলিঙ্গে বিশেষ বস্তু অর্পণ করা হয়, এটিই শিবের রুদ্রাভিষেক। শ্রাবণ মাসে রুদ্রাভিষেক করলে শুভ ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া, কষ্ট ও গ্রহপীড়া দূর করার জন্যও রুদ্রাভিষেক কার্যকরী।
মনে রাখবেন, মন্দিরে গিয়ে রুদ্রাভিষেক করা শ্রেষ্ঠ। তবে বাড়িতে পার্থিব শিবলিঙ্গেও অভিষেক করা যেতে পারে। বাড়ির তুলনায় মন্দিরে, আবার মন্দিরের তুলনায় নদী তীর ও নদী তীরের তুলনায় পর্বতে রুদ্রাভিষেক অত্যন্ত ফলদায়ী।
কোন বস্তু দিয়ে অভিষেকের কী ফল:
- ঘিয়ের ধারায় অভিষেক করলে বংশ বিস্তার হয়।
- আখের রস দিয়ে অভিষেক করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়, দুর্যোগ নষ্ট হয়।
- চিনি মিশ্রিত দুধের অভিষেক ব্যক্তিকে বিদ্বান করে।
- মধু দিয়ে অভিষেক করলে পুরনো রোগ নষ্ট হয়।
- গোরুর দুধের অভিষেক করলে আরোগ্য লাভ হয়।
- চিনি-জল দিয়ে অভিষেক সন্তান প্রাপ্তি সহজ করে তোলে।
- ভস্ম দিয়ে অভিষেক করলে ব্যক্তি মোক্ষ-মুক্তি প্রাপ্ত করে।
- তেল দিয়েও শিবের অভিষেক হয়। তবে এটি মারণ প্রয়োগ। সাধারণত না-করাই ভালো।
কখন রুদ্রাভিষেক করানো উত্তম ফলদায়ী:
রুদ্রাভিষেকের জন্য শিবের উপস্থিতি বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিবের নিবাস না-দেখে রুদ্রাভিষেক করা অনুচিত। এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। মনস্কামনা পূরণের জন্য রুদ্রাভিষেক করিয়ে থাকলে, শিবের বাসস্থান বিচার আবশ্যক।
কোথায় শিবের নিবাস মঙ্গলকারী:
- প্রত্যেক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া ও নবমী, কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদা, অষ্টমী ও অমাবস্যায় মহাদেব গৌরীর সঙ্গে বাস করেন।
- কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী ও একাদশী এবং শুক্লপক্ষের পঞ্চমী ও দ্বাদশী তিথিতে ভোলানাথ কৈলাসে থাকেন।
- আবার কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী ও দ্বাদশী এবং শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী ও ত্রয়োদশী তিথিতে শিব নন্দীর ওপর সওয়ার হয়ে বিশ্বভ্রমণ করেন।
এই সমস্ত তিথিতে মহাদেবের নিবাস মঙ্গলকারী, তাই এ সময় রুদ্রাভিষেক করা যেতে পারে।
কখন মহাদেবের নিবাস অনিষ্টকারী:
- কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী, চতুর্দশী, শুক্লপক্ষের প্রতিপদা, অষ্টমী, পূর্ণিমায়ে শিব শ্মশানে ধ্যানমগ্ন থাকেন।
- কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয়া, নবমী, শুক্লপক্ষের তৃতীয়া ও দশমীতে দেবসভায় উপস্থিত থেকে, মহাদেব সকল দেবতাদের সমস্যা শোনেন।
- কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়া, দশমী ও শুক্লপক্ষের চতুর্থী ও একাদশীতে নটরাজ ক্রীড়ারত থাকেন।
- কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী, ত্রয়োদশী ও শুক্লপক্ষের সপ্তমী ও চতুর্দশীতে রুদ্রদেব ভোজন করেন।
এই তিথিতে সকাম অভিষেক করা উচিত নয়। তবে শিবরাত্রি, প্রদোষ ও শ্রাবণ মাসের সোমবার সিদ্ধ পীঠ অথবা জ্যোতির্লিঙ্গের ক্ষেত্রে শিবের বাসস্থান বিচার করা জরুরি হয় না। এই স্থান ও সময় সর্বদা মঙ্গলকারী।