২০২২ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে খুব শিগগির। 'সাইক্লোন অশনি' ঘিরে ইতিমধ্যেই একাধিক সতর্কতা জারি হয়েছে। অন্যদিকে নিজের মেজাজে বঙ্গোপসাগরে ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। প্রতিবারই সাইক্লোনের আসার খবর মানেই আমফানের স্মৃতির উস্কানি। বিধ্বংসী ঝড়ে সেবার বাংলা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে 'সাইক্লোন যশ' আছড়ে পড়ে বাংলায়। সেই ভয়াবহতা আজও ত্রাসের সঞ্চার করে অনেকের মনে। এরপর ২০২২ সালের শুরুতেই আগামী সপ্তাহে আছড়ে পড়তে চলেছে সাইক্লোন অশনি।
২০২২ সালের প্রথম 'সাইক্লোন' মোকাবিলায় এবার বাংলার অস্ত্র 'বায়ো শিল্ড'। এই বায়োশিল্ড বাংলার উপকূল রক্ষায় অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে চিহ্নিত হয়। সাইক্লোনের হাত থেকে বাংলার উপকূল তথা বিশেষত সুন্দরবনকে রক্ষায় এই শিল্ড বানানো হয়। এই বায়োশিল্ড মূলত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের প্রাচীর। যা ঘূর্ণিঝড়ের তেজ রুখে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১ সালে 'সাইক্লোন' যশের পরই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটি পরামর্শ দিয়েছিল বিশেষ প্রজাতির 'ভেটিভার' ঘাস যেন এই বায়োশিল্ডে ব্যবহার করা না হয়। শিল্ডে এই ঘাস ব্যবহারের সতর্কতা আগেই জারি করে কমিটি। যদিও ফিলিপিন্স, চিন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েৎনামের মতো দেশে ভেটিভার ঘাসের সিস্টেমকে বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেক্রে বহু জটিলতার সমাধান হিসাবে দেখা হয়।
প্রশ্ন উঠছে কেন এই ঘাস ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে? জানা যাচ্ছে, এই ঘাস একবার জন্মে গেলে তা মানবিক শ্রমে উৎপাটনে সমস্যা তৈরি হয়। এই প্রজাতি নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের মতো দ্রবীভূত পুষ্টি শোষণ করে নেয়। এটি মাটির মাটির গঠন পরিবর্তন করে দেয়। আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা বলছেন, 'এটা প্রাক বর্ষা সাইক্লোন মরশুম। বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় সাগরে তৈরি হচ্ছে। এখন এটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি ঘনীভূত হবে। সম্ভবত এটি ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গকে ছাড় দেবে, তবে যেতে পারে বাংলাদেশ-ওড়িশা উপকূলের দিকে।' এদিকে, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় যশের আছড়ে পড়ার পর বাংলার বনদফতরের হাত ধরে আসে এই বায়োশিল্ড। ঠিক করা হয় তিনটি পর পর লেয়ার দিয়ে তৈরি হবে এই বায়োশিল্ড। এই সবুজের 'ঢাল' উপকূলবর্তী বিভিন্ন গ্রামকে রক্ষা করতে পারবে বলে মনে করা হয়েছিল।
২০২১ সালে যে কমিটি মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করেছিলেন তার প্রধান ছিলেন কল্যাণ রুদ্র। আর তাঁর পরামর্শেই এই শিল্ড ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। রিপোর্টে যদিও বলা হয়, 'এই প্রজাতি নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট গবেষণা ছাড়া, বিশেষ করে সুন্দরবনের মতো ভঙ্গুর ইকোসিস্টেমে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য এই উদ্ভিদ ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয় না। তবে, এটি একটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে নন-টাইডাল এলাকায় চালু করা যেতে পারে।' উল্লেখ্য, এই ঝড়ের দাপট রুখতে বেড়িবাঁধগুলিকে পাঁচটি জোনে বিভক্ত করা হবে - তিনটি সম্মুখভাগে এবং দুটি স্থলভাগে। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ এবং ঘাস লাগানো হবে বাঁধগুলিকে শক্তিশালী করতে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ এবং বিভিন্ন ধরনের ঘাস লাগানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।