হাতসাফাই করে মঙ্গলসূত্র নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের গৃহবধূ দীপমালা চৌধুরী দুষ্কৃতীর হাত থেকে মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে আনতে দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা চালালেন। স্কুটি চালিয়ে নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করলেন তিনি। এমনকী চলন্ত স্কুটি থেকে পায়ে ধাক্কা মেরে এক দুষ্কৃতীকে রাস্তায় ফেলে দেন। তখন জখম ওই দুষ্কৃতী অপর এক দুষ্কৃতীর মোটরবাইকে চড়ে চম্পট দেয়। তাই মঙ্গলসূত্র–সহ লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না উদ্ধার করতে পারেননি ওই গৃহবধূ। তবে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে দুর্গাপুর থানার পুলিশ এসে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ঠিক কী ঘটেছে দুর্গাপুরে? স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্গাপুর বেনাচিতি এলাকার বাসিন্দা গণেশ চৌধুরী। তিনি পেশায় ঠিকাদার। আর তাঁর স্ত্রী দীপমালা। তাঁদের ১২ বছরের এক কন্যাসন্তানও আছে। এদিন বাড়িতে তাঁরা সকলেই ছিলেন। তখন চারজন দুষ্কৃতী দু’টি মোটরবাইকে করে আসে। তাদের মধ্যে দু’জন দুষ্কৃতী একটি নামী সংস্থার সেলসম্যানের পরিচয় দিয়ে গণেশবাবুর বাড়িতে যায়। আর গৃহবধূ দীপমালাদেবীকে ধাতু পালিশ করার পাউডার বিক্রেতা বলে পরিচয় দেয়। দীপমালাদেবী ওই পাউডার কিনতে আগ্রহ দেখালে দুষ্কৃতীরা পাউডার পরীক্ষা করে দেওয়ার জন্য প্রথমে কাঁসা ও পেতলের বাসনপত্র চায়। তখন গৃহবধূ কয়েকটি বাসন দেয় তাদের। বাসনে ওই পাউডার দিয়ে দুষ্কৃতীরা সুন্দর পালিশ করে দেয়।
তারপর ঠিক কী ঘটল? গৃহবধূর বয়ান অনুযায়ী, এটা দেখিয়ে দীপমালাদেবীর পায়ে পড়ে থাকা রুপোর নূপুরটি পরিষ্কার করে দিতে চায় দুষ্কৃতীরা। সেটাও পালিশ করে দেয়। এসব করে গৃহবধূর বিশ্বাস অর্জন করে দুষ্কৃতীরা। আর সোনার গয়না পালিশ করার কথা জানায়। দীপমালাদেবী একটি মঙ্গলসূত্র, একটি সোনার চেন এবং একটি কানের দুল তাদের পালিশ করতে দেন। আর তখনই গয়নাগুলি পালিশ করে একটি পাউডারের প্যাকেটে ভরে দীপমালাদেবীর হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। দীপমালাদেবীর সন্দেহ হতেই প্যাকেটটি খুলে দেখেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, গয়নাগুলির বদলে নুড়িপাথর রয়েছে।
তখন কী করলেন গৃহবধূ? এটা যখন তিনি দেখেন ততক্ষণে রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়। দীপমালাদেবীও তড়িঘড়ি স্কুটি চালিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। ভিড়িঙ্গি মোড়ে সজোরে স্কুটি নিয়ে তাদের মোটরবাইকে ধাক্কা দেন গৃহবধূ। তাতেই পড়ে যায় এক দুষ্কৃতী। আর কিছুটা দুরে গিয়ে পড়ে যেতেই অন্য দুষ্কৃতীদের মোটরবাইকে চড়ে জাতীয় সড়ক ধরে পালিয়ে যায়। গণেশবাবু বলেন, ‘প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার গয়না নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।’