হাওড়ার লিলুয়া হোমে চার বছর ধরে আটকে রয়েছেন তরুণী। এবার এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে উঠে এলো। এমনকী এখনও বাংলাদেশে মা–বাবার কাছে ফিরতে পারেননি এই তরুণী। কিন্তু কেন এমন হল? জানা গিয়েছে, নারী পাচারের যে মামলায় জড়িয়ে থাকার জন্য দেশে ফিরতে পারছেন না ওই তরুণী, তাতে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সদস্যরা এলেও নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগের অভাবে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি।
এদিকে হাওড়া জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণীকে চাকরির টোপ দেওয়া হয়েছিল। সেই টোপে ২০১৭ সালে বনগাঁয় তাঁকে নিয়ে আসে এক দালাল। এমনকী তাঁকে বিক্রি করা হয় বেঙ্গালুরুর নিষিদ্ধপল্লিতে। সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা অধরা থেকে যায়।
কেন তিনি ফিরতে পারলেন না? বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে দালালরা ওই তরুণীকে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে টাকা ও গয়না হাতিয়ে চম্পট দেয়। আবার দালালরাই বনগাঁ পুলিশের হাতে তুলে দেয় তরুণীকে। আদালতের নির্দেশে এখন তাঁর স্থান হয় লিলুয়া হোমে। আর দালালদের খোঁজ করছে পুলিশ। অথচ সব হারিয়ে আজ দিন কাটছে হোমে।
কিভাবে জানাজানি হল ঘটনাটি? তরুণীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন পশ্চিম মেদিনীপুরের যুবক রাজু দাস। তিনি জানান, মুম্বইয়ে আয়কর দফতরে গাড়িচালকের কাজ করতেন তিনি। তখন এক মহিলা তাঁকে ওই তরুণীর বিপদের কথা জানান। রাজ্যে ফিরে রাজু যোগাযোগ করেন তরুণীর সঙ্গে। তাঁর বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জোগাড় করেন। রাজুই যোগাযোগ করেন তরুণীর ভাইয়ের সঙ্গে। রাজু বলেন, ‘ওই ব্যক্তির থেকে জানতে পারি, ওঁরা খুবই গরীব। টাকা খরচ করে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই পরিবারের। আমিই মেয়েটিকে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করি।’
রাজুর বয়ান অনুযায়ী, হাওড়া জেলা প্রশাসন থেকে বিদেশ মন্ত্রক— তরুণীকে ফেরাতে সর্বত্র চিঠি লিখেছেন তিনি। ছুটেছেন বনগাঁ আদালত ও হাওড়া আদালতে। এখনও নিজের টাকা খরচ করে হাইকোর্টে মামলা লড়ছেন। তরুণীর ভাইও নিজেদের জমি বিক্রি করে ছোটাছুটি করছেন দিদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘মামলা চললে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে। কোভিডের কারণে বহু মামলার মীমাংসা হয়নি। তবে ওই তরুণীকে দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে।’