আদতে ছিল গরু। কিন্তু নথিতে সেগুলি হয়ে যেত ছোটো এবং কম ওজনের বা ‘বাছুর’। আর গরুর যে আসল দাম, তার থেকে কম দামে সেই ‘বাছুর’ নিলাম করা হত। সেখান থেকে বিএসএফ ও শুল্ক দফতর আধিকারিকদের মিলত ‘ঘুষ’। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিবিআই) উল্লেখ করে একথা জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পাচার নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এএফআইআরে নাম রয়েছে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের প্রাক্তন কমান্ডান্ট, পাচার চক্রের মাথা এনামূল হক-সহ আনারুল শেখ এবং মহম্মদ গোলাম মুস্তাফার।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মালদহে ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন সতীশ কুমার। যিনি এখন ছত্তিশগড়ের রায়পুরে মোতায়েন আছেন। বাংলা থাকার সময় তাঁর অধীনে মালদহে দুই এবং মুর্শিদাবাদে চার কোম্পানি বাহিনী ছিল। ওই ১৬ মাসে পাচারের আগে সীমান্তে ২০,০০০-এর বেশি গরু বাজেয়াপ্ত করেছিল বিএসএফ। কিন্তু কখনও গাড়ি এবং পাচারকারীরা সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জালে ধরা পড়েনি। সেখানেই পাচারকারীদের সঙ্গে এক শ্রেণির বিএসএফ ও শুল্ক দফতর আধিকারিকদের যোগসাজশ উঠে এসেছে বলে খবর।
সূত্রের খবর, আসলে যে গরু বাজেয়াপ্ত করা হত, খাতায়কলমে তা পালটে যেত। গরুর ওজন কমে যেত। ছোটোও দেখানো হত। তারপরই কম দামে সেই বাজেয়াপ্ত গরুগুলিকে নিলামে তোলা হত। সিবিআইয়ের অভিযোগ, শুল্ক দফতরের নিলামে সেই গরুগুলি ফের কিনে নিত আনারুল ও মুস্তাফা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, 'এরকম আনুকূল্যের বিনিময়ে বিএসএফ আধিকারিকদের গরু পিছু ২,০০০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট শুল্ক দফতরের আধিকারিকদের ৫০ টাকা দিত এনামূল হক। তাছাড়াও এনামূল, মুস্তাফা এবং আনারুল শেখের মতো সফল হওয়া লোকেদের থেকে নিলামে যে দাম উঠত, তার ১০ শতাংশ ঘুষ নিতেন শুল্ক দফতরের কয়েকজন আধিকারিক।'
এফআইআরে জানানো হয়েছে, বাজেয়াপ্ত গবাদি পশুদের চারণের জন্য কোনও টাকা নেওয়া হত না। তবে খাওয়ানোর জন্য কয়েকজন বিএসএফ আধিকারিককে গরু পিছু ৫০ টাকা দিত এনামূল, মুস্তাফা, আনারুলের মতো পাচারকারীরা।
অপর এক বিএসএফ কমান্ডান্ট জিবু টি ম্যাথুকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের মার্চে এনামূলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তার আগে সেই বছর জানুয়ারিতে ৪৭ লাখ টাকা নগদ-সহ কেরালার আলাপ্পুজা স্টেশন থেকে ম্যাথুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এনামূলের বিরুদ্ধে যে বেআইনি কাজের যোগ উঠেছিল, তা নিয়ে এপ্রিল থেকে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সেই তদন্তেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এরকম তথ্য উঠে আসে। তারপর বুধবার দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, পঞ্জাবের অমৃতসর এবং ছত্তিশগড়ের রায়পুরের ১৫ টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়।