সেই মহারাজাও নেই। সেই রাজত্বও নেই। তবে কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো আজও রাজ আমলের রীতি মেনেই হয়। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কোচবিহারবাসীর আবেগ। জনশ্রুতি আছে একসময় নাকি এই পুজোতে নরবলি হত। তবে কালক্রমে সেই প্রথা অবলুপ্ত হয়ে যায়। তবে রাজ আমলে আদৌ নরবলি হত কি না তা নিয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না বলে অনেকের মত। গোটাটাই গবেষণাসাপেক্ষ। তবে এখনও দেবীর কাছে নিবেদন করা হয় নররক্ত।
বছরের পর বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। একেবারে বংশ পরম্পরায় কোচবিহারের কালজানির একটি পরিবার এই নররক্ত দেবীর কাছে নিবেদন করেন। কীভাবে হয় এই গুপ্ত পুজো?
স্থানীয় সূত্রে খবর, মহা অষ্টমীর রাতে দেবী বাড়ির গর্ভগৃহ থেকে প্রায় সকলকেই সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রাজপুরোহিত, দুয়ারবক্সি ও কালজানির শিবেন রায় থাকেন। তিনিই সাধারণত রক্ত দিয়ে থাকেন। দেবীর মূর্তির অনুকরণে গড়া হয় ছোট্ট মূর্তি। বাজতে থাকে ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা। এরপর কানসাইট কয়েক ফোঁটা রক্ত দেবীর কাছে নিবেদন করেন। যিনি রক্ত দেন তিনি কানসাইট নামেই পরিচিত। মাঝরাতে স্নান সেরে তিনি উপস্থিত হন দেবীবাড়িতে। দেবীর কাছে রক্ত নিবেদন করে আবার তিনি ফিরে যান কালজানিতে। এই প্রথা আজও জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে।
রাজপ্রথা মেনে এভাবে পূজিতা হন বড়দেবী। এই পুজোর বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয় রাজ আমলের প্রথা। রাজপুরোহিতের উপস্থিতিতে চলে দেবীর আরাধনা। দুর্গা ঠাকুরের সঙ্গে গঠনগত দিক থেকে বড়দেবীর কিছুটা ফারাক রয়েছে।কথিত আছে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো। প্রতি বছরই এই পুজো দেখতে বাসিন্দাদের ঢল নামে।