কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে। মাঠের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা বাড়িটার দিকে ছুটে গেল বহু মানুষজন। তখন ঘটনাস্থলের পাশের পুকুর থেকে সংলগ্ন রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে রয়েছে পোড়া লাশ। ধড় থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া হাত–পা পড়ে রয়েছে রাস্তায়। মৃতদেহগুলি এতটাই বিকৃত যে শনাক্ত করাই যাচ্ছে না। বাতাসে মাংস পোড়ার তীব্র দুর্গন্ধ। এটাই ছিল এগরায় বিস্ফোরণের পরের দৃশ্য। আর আজ, বুধবার এগরা বিস্ফোরণের জেরে যে গণহত্যা হয়েছে তাতে দু’জনকে গ্রেফতার করল এগরা থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গ্রেফতার হওয়া দু’জনের নাম দেবসুন্দর জানা ও তপন দেবনাথ। এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। তাদের জেরা করা হচ্ছে। আর এই ঘটনায় এগরা থানার আইসিকে শোকজ করা হয়েছে। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এগরা থানার আইসি–কে শোকজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ভানু বাগ কেমন করে জামিন পেলেন তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে এবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল দু’জন। অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা এবং চারজন পুরুষ। ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজন। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত এবং জখমরা সবাই বাজি কারখানার কারিগর এবং ওই গ্রামেরই বাসিন্দা।
আর কী জানা যাচ্ছে? এই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তখনই গ্রেফতার করা হয় দুই অভিযুক্তকে। ধৃত দু’জন বারুদ সংগ্রহ করে নিয়ে আসত। আর তা তুলে দিত ভানুর হাতে। আজ, বুধবার তাদের তোলা হবে কাঁথি মহকুমা আদালতে। আরও তথ্য পেতে জেরা পর্ব চলছে। মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ এখনও পলাতক। তাঁর খোঁজে ওড়িশা যাচ্ছে জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যেই এগরায় এসে পৌঁছেছেন পুলিশ কর্তা জ্ঞানবন্ত সিং। সঙ্গে রয়েছে ফরেনসিক টিম। আন্তঃরাজ্য সীমান্তে নাকা চেকিং বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এখন কী বলছেন গ্রামবাসীরা? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসীর দাবি, আগে যখন এমন ঘটনা ঘটেছিল তখনও সবাই প্রতিবাদ করেছিলাম। ভানু সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ আছে। টাকা খাইয়ে পুলিশকে চুপ করিয়ে দেয়। এছাড়া এলাকায় তার একটা দাপট ছিল। কেউ কিছু বললেই ক্ষতি করে দেওয়ার হমকি দিত ভানু। আগে সিপিএম করত। তারপর সরকার পরিবর্তন হলে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তবে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, ২০১৮ পর্যন্ত ভানু বাগ তাদের দল করলেও এখন সে বিজেপি করে।