গোটা কৃষক পরিবারের রহস্যমৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন এলাকায়। দুই শিশু, দুই মহিলা–সহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘরের ভিতরে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ জামালপুরের বাসিন্দা ছিল ওই পরিবার। মৃতদের নাম কুলোবালা বর্মন (৬০ বছর), তাঁর ছেলে অনু বর্মন (৩২ বছর), অনু বর্মনের স্ত্রী মল্লিকা বর্মন (২৮ বছর), দুই সন্তান বিউটি বর্মন (১০ বছর) ও স্নিগ্ধা বর্মন (৭ বছর)।
স্থানীয় সূত্রে খবর, অনু বর্মন পেশায় কৃষক ছিলেন। শনিবার অনু বর্মনের জমিতে ধান কাটার পর পারিবারিক একটা খাওয়া–দাওয়ার অনুষ্ঠান ছিল। পারিবারিক সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। এরপরই রবিবার সকালে প্রথমে অনু বর্মনের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। সঙ্গে পরিবারের বাকি সদস্যের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। দেহগুলি একই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে। রবিবার ভোরে প্রতিবেশীরা তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন ধানকাটার মেশিন আনতে। কিন্তু ওই কৃষককে ডাকাডাকি করলেও তাঁদের কারও সাড়া মেলেনি। এরপরই সন্দেহ হওয়ায় ধাক্কা দিতেই খুলে যায় দরজা। তখনই স্থানীয়দের নজরে পড়ে ভয়ংকর দৃশ্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, অনু বর্মনের ক্যানসার হয়েছিল। তাই পরিবারের সবাইকে খুন করে তিনি নিজে আত্মঘাতী হন। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অনু সবাইকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে এখন নানা কোণ থেকে তদন্ত চালানো হচ্ছে। এই পরিবারের দুই মহিলা এবং দুই শিশুর নলি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে।’
এই কৃষক পরিবারের আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ওই রাতে কোনও চিৎকার বা কান্নার শব্দ তাঁরা পাননি। বরং কিছুদিন আগে অনু বর্মন গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য স্বাধীন বর্মন জানান, অনু ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন এবং অবসাদে ভুগছিলেন। শুধুমাত্র অবসাদের কারণেই শেষ হয়ে গেল তরতাজা পাঁচটা প্রাণ? উত্তরের সন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
অনু বর্মনের প্রতিবেশী অনন্ত জানান, এই পরিবারের শুধু পাঁচ বিঘা জমি ছিল। যা দিয়ে গোটা পরিবারের ভরণপোষণ এবং নিজের চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব হয়ে উঠছিল না। সম্প্রতি জমিতে ধান বুনেছিল অনু এবং তার জন্য খাওয়া–দাওয়ার আয়োজন করেছিল।