নিয়োগ দুর্নীতির বীজবপন হয়েছিল সিপিএম আমলে বলে দাবি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সেইসব তথ্য খুঁজে বের করার কাজ চলছে। চিরকূটে চাকরি থেকে কোটায় চাকরির নথি বের করা হচ্ছে। তার মধ্যে উদয়ন গুহ থেকে তাপস রায় বিরোধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আর এবার পাল্টা বিরোধীদের বিঁধতে বাম আমলে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তোপ দাগলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আর তা নিয়ে এখন রাজ্য–রাজনীতিতে জোর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। রবিবাসরীয় দিনে তুঙ্গে উঠেছে চর্চা।
ঠিক কী বলেছেন শোভনদেব? খড়দায় একটি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি চোর হতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চোর নন।’ এই মন্তব্য করার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে অত্যন্ত সৎ রাজনীতিবিদ বলেই শাসক–বিরোধী সবাই মানে। তবে বামফ্রন্টের জমানায় ‘পলিটেকনিক কলেজে অন্তত ২০০ অধ্যাপককে বেআইনিভাবে নিয়োগ’ করার বিষয়ে সরব হন তিনি। আর মন্ত্রী বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হতে গেলে মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রজত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হলেও তাঁর কোনও স্তরেই ওই নম্বর ছিল না। এমন অনেক কেস রয়েছে। দুর্নীতির সব তথ্য আমার কাছে রয়েছে। দুশো অধ্যাপককে নিয়োগ করেছিল ওরা। অধ্যাপক নিয়োগ তখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ছাড়া হতো না। তাঁদের ৬৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। কিন্তু যাঁরা নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের একজনেরও এই নম্বর ছিল না। এখন আমরা যদি বলি, সিপিএমের আমলে কারা চাকরি পেয়েছিল, তাঁদের তাড়িয়ে দাও, সেটা হয় না।’
আর কী জানা যাচ্ছে? সিপিএমের দুর্নীতির দায় তৃণমূল কংগ্রেস নেবে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই সে কথা বলেছিলেন। এবার দুর্নীতির তকমা গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে কাগজপত্র বের করা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের গায়ে দুর্নীতির লেবেল সেঁটে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চাইছে বলে অভিযোগ ঘাসফুল শিবিরের। আর নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য বের করে তা সেটা সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই এখন ই–মেলে তথ্য চাওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
শোভনদেবের এমন মন্তব্যের কারণ কী? নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকার জড়িত নয়। আর যারা জড়িত দল তাদের সমর্থন করেনি। বরং বহিষ্কার করেছে। তাই এদিন পরিষদীয় মন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের মধ্যে ভাল–খারাপ দুই–ই রয়েছে। সৎ–অসৎ দুটো শব্দও রয়েছে। কিছু অসৎ লোক নিশ্চয়ই আছে, তার জন্য তো গোটা দল নষ্ট হয়ে যায় না। একটা মন্দিরে পুরোহিত চোর, দেবতা কি চোর হয়ে যায়? অপবিত্র হয়ে যায়? যাঁকে আমরা দেবতা মনে করি, সত্যিই শ্রদ্ধা করি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন? আমি চোর হতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন?’