ওড়িশার বালাসোরের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরল বাঁকুড়ার ওন্দায়। রবিবার ভোরের দিকে ওন্দা স্টেশনে একটি মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারল অপর একটি মালবাহী ট্রেন। লাইনচ্যুত হয়ে যায় দুটি মালগাড়ির ১০টির বেশি বগি। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির উপর উঠে যায় অপর মালগাড়ির ইঞ্জিন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন রেলের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও মালগাড়ির লোকো পাইলট বা গার্ড বড়সড় আঘাত পাননি। সামান্য চোট পেয়েছেন একটি মালগাড়ির লোকো পাইলট বা চালক। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে কোনও একটি যদি যাত্রীবাহী ট্রেন হত, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। প্রচুর মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু ওড়িশায় ভয়াবহ ঘটনার পর তিন সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই কীভাবে এরকম ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেল।
প্রাথমিকভাবে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ওন্দা স্টেশনের লুপ লাইনে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল (বিষ্ণপুরের অভিমুখে যাওয়ার জন্য)। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ সেই লুপ লাইনেই ঢুকে পড়ে অপর একটি মালগাড়ি। যেটা বিষ্ণপুরের দিকে যাচ্ছিল। দুই মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয়ে যায় কমপক্ষে ১২টি বগি। যে মালগাড়িটি পিছন থেকে ধাক্কা মারে, সেটির ইঞ্জিন অপর মালগাড়ির উপর উঠে যায়।
অর্থাৎ চলতি মাসের শুরুতেই বালাসোরে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ঠিক সেভাবেই ওন্দায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় বাহানগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল আপ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছিল করমণ্ডলের একাধিক বগি। কয়েকটি বগি অন্য লাইনেও ছিটকে গিয়েছিল। সেইসময় যে লাইন দিয়ে আসছিল হাওড়াগামী ট্রেন। করমণ্ডলের বগিতে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে ডাউন ট্রেনেরও কয়েকটি বগি। সেই ঘটনায় প্রায় ৩০০ জের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, আজও প্রাথমিক ঘটনাটি ঠিক সেটাই হয়েছে। মালগাড়ি হওয়ায় প্রচুর মানুষের প্রাণহানি আটকানো গিয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কীভাবে এরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে রেলের তরফে আপাতত সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।তারইমধ্যে সেই সংঘর্ষের পর তড়িঘড়ি লোকো পাইলটদের উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান রেলের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনার জেরে ওন্দা স্টেশনের ওভারহেড তার ছিড়ে গিয়েছে। আদ্রা-খড়্গপুর শাখায় (করমণ্ডল দুর্ঘটনা ঘটেছিল খড়্গপুরের একটি শাখাতেই) ব্যাহত হয়েছে রেল পরিষেবা। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ওই দুর্ঘটনার জেরে একাধিক ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক ট্রেনের যাত্রাপথ।