বৃহস্পতিবার সকালে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই মানুষ তাঁর ইতিহাস জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে এসে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করেছে। আর তখন থেকেই রাজ্যের সাধারণ মানুষ জানতে চাইছে কে এই অনুব্রত মণ্ডল? কী ভাবে তাঁর এই উত্থান? দোর্দণ্ড প্রতাপ, বেতাজ বাদশা—এইসব বিশেষণই খাটে তাঁর ব্যাখ্যায়।
কে এই অনুব্রত মণ্ডল? তিনি বিধায়ক নন, সাংসদ নন, শহরের রাজনীতিতে পরিচিত হেভিওয়েট নেতা নন। কিন্তু তারপরও বোলপুরে তাঁর নামে বাঘে–গরুতে একঘাটে জল খায়। নির্দিষ্ট জেলায় রাজনীতি করা একজন মানুষ হয়েও সবার কাছে পরিচিত কেষ্ট বলেই। বাংলার রাজনীতিতে তিনিই সবচেয়ে বেশি চর্চিত নাম। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব প্রশ্নাতীত। গুড় বাতাসা, চড়াম চড়াম ঢাক, পাচনের বারি—তাঁরই মুখ থেকে বেরিয়ে আসা রাজনৈতিক হাতিয়ার। অনুব্রতর বাবা কৃপাসিন্ধু মণ্ডল। তাঁর মুদিখানার দোকান ছিল। সেই সঙ্গে একটা গ্রিলের কারখানা ছিল। অনুব্রত এখন থাকেন বোলপুরের নীচুপট্টি এলাকায়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ছিল বোলপুর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নানুর থানার হাটসেরান্দি গ্রামে। ছোটবেলা সেখানেই কেটেছে কেষ্ট মণ্ডলের।
কেমন ছিল অনুব্রত মণ্ডলের প্রথম জীবন? বোলপুরে ঘুরে শোনা যায়, আর্থিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিল না তাঁরা। প্রথম জীবনে মাছ বিক্রি করতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই কেষ্টর পড়াশোনায় কোনও আগ্রহ ছিল না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর স্কুলে যাননি। বাবার মুদিখানা দোকানে বসে পড়েন। অনুব্রত কংগ্রেসি রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তখন বীরভূমের গ্রামে সিপিআইএম নেতাদের উৎপাত ক্রমশই বাড়ছিল। তার মোকাবিলায় অনুব্রত বরাবরই ছিলেন বেপরোয়া। তবে কংগ্রেস রাজনীতিতে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেননি অনুব্রত।
কী ভাবে উত্থান অনুব্রত মণ্ডলের? সদ্য প্রয়াত চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পরে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এখন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। এটুকুই তাঁর পরিচয়। অথচ অনেক মন্ত্রীর তুলনায় অধিক চর্চিত অনুব্রত। তাঁর মন্তব্য হয়ে যায় শিরোনাম। যে গ্রামের বাড়ি ছিল সাধারণ সেখানে এখন দুর্গাপুজোর বসে অনুব্রত মণ্ডলের মজলিশ। এখানেই তাঁর ৩০ বছর বয়স যখন গ্রামের মেয়ে ছবি’র সঙ্গে প্রেম হয়। তারপর তা গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। অনুব্রতর শ্বশুরমশাই ট্যুর–ট্রাভেলের ব্যবসা করতেন। আর বোলপুর বাজারে তাঁর একটি জুতোর দোকান ছিল। আর্থিক অবস্থা ঘুরতে শুরু করে অনুব্রতর। ১৯৯১ সালে তাঁদের মেয়ে হয়, নাম সুকন্যা।
তারপর ঠিক কী ঘটল? জানা গিয়েছে, এরপর অনুব্রত প্রোমোটিং ব্যবসা শুরু করেন। তখন তাঁর ব্যবসার পার্টনার ছিলেন চন্দ্রনাথ সিং। এই চন্দ্রনাথ সিং এখন রাজ্যের মন্ত্রী। নানুর গণহত্যার পর রাজ্য–রাজনীতিতে উঠে আসে অনুব্রত মণ্ডলের নাম। কারণ তিনি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তখন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেকনজরে পড়েন তিনি। এই শুরু হল অনুব্রত মণ্ডলের উত্থান। মুকুল রায় যখন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ডঁ–ইন–কমান্ড, সেই সময় মুকুলের ভরসার জায়গা ছিলেন অনুব্রত।