দীর্ঘ তিন ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণে এল বাগবাজার ব্রিজ সংলগ্ন বস্তির অগ্নিকাণ্ড। কিছু পকেট ফায়ার (ছোটখাটো আগুন) এখনও রয়েছে, তা নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। কোনও ঘরে যদি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় থাকে সেগুলি বের করার চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা।
বিধ্বংসী আগুনের জেরে ১০০টিরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনার খবর পেয়ে গঙ্গাসাগর থেকে হেলিকপ্টারে বাগবাজারে এসে পৌঁছেছেন কলকাতা পুরসভার প্রধান প্রশাসক তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘কাল, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’
এদিকে, সর্বস্ব হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বস্তির বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, হাজারেরও বেশি ঝুপড়ি ঘর ছিল এই বস্তিতে। সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন দু’জন। এক— তারক মহারাজ, দুই— বাপি ঘোষ। এদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বস্তিবাসীদের একাংশ। জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নাম বাপি ঘোষ। তাঁর নাম এদিন শোনা গিয়েছে ফিরহাদ হাকিমের মুখেও।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে বাগবাজার উইমেনস কলেজ সংলগ্ন ওই এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়ন করা হয়েছে র্যাফ। লোকজন রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। একইসঙ্গে আগুনের গ্রাসে সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘আমরা লোকের বাড়ি বাসন মেজে মেজে তিলে তিলে এক–একটা জিনিস করেছি। সব ধ্বংস হয়ে গেল। পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’ কেউ বলেন, ‘আমাদের সব ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমাদের আর কিছু থাকল না। সব শেষ।’
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ‘আমাদের পাকা ঘর করতে দেননি তারক মহারাজ। সব ধ্বংস করে দিল। ৩ ঘণ্টা পরে দমকলের ইঞ্জিন এসেছে। এর পিছনে বাপি ঘোষেরও হাত আছে।’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘তারক মহারাজ আগুল লাগিয়ে দিয়েছে। মঠের মিটার বাক্সে আগুল লাগিয়েছে। এত বড় মঠে কি জলের ট্যাঙ্ক নেই? চাইলেই আগুন নিভিয়ে দিতে পারত।’
এদিকে, এদিন বাগবাজার আসার পথে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ওখানে অতীন ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজা আছেন। কাউন্সিলর বাপি ঘোষও রয়েছেন। কর্পোরেশনের আধিকারিকরাও রয়েছেন। আমরা ৪টি কমিউনিটি হল ঠিক করেছি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের রাখার জন্য। সেখানে তাঁদের খাওয়াদাওয়া, কম্বলের ব্যবস্থা করেছি। কাল, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করে দেব।’