বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের। এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ৩২ হাজার অপর্শিক্ষিত শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হবে চার মাস পর। তবে এই চারমাস তারা প্রাথমিক শিক্ষকের বেতনের বদলে পার্শ্বশিক্ষকের বেতন পাবেন। আপাতত সেই নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নিয়োগের মধ্য়ে থেকে ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীনদের চাকরি বাতিল করা হয়। তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরোধিতায় ডিভিশন বেঞ্চে দ্বারস্থ হন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তাঁদের হয়ে মামলাটি লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ডিভিশন বেঞ্চের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের পর তিনি বলেন, ‘এভাবে কী চাকরি খাওয়া যায় নাকি। আমরা বলছি, এই নির্দেশ বেআইনি।’ কল্যাণবাবু জানান, যেহেতু চাকরিহারাদের কথা না শুনেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ শোনান, তাই এই স্থগিতাদেশ। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর। এদিকে আগামী চারমাস প্রাথমিক শিক্ষকের বেতনই পাবেন এই ৩২ হাজার শিক্ষক।
এদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতোই কাজ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সকলেই অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে উচ্চ আদালত। এদিকে চাকরি বাতিল না হলেও ৩২ হাজার শিক্ষককেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে মোট ৪২,৫০০ শিক্ষককে প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ডিএলএড ডিগ্রি ছিল মাত্র কয়েকজনের। সিংহভাগই ছিলেন প্রশিক্ষণহীন। এই আবহে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, নতুন করে ইন্টারভিউ পাশ করে চাকরিতে ফিরতে হবে। প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এই রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই মামলায় অভিযোগ উঠেছিল, ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম পালন করা হয়নি। পরে ইন্টারভিউয়ারদের গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট সহ স্বচ্ছ ইন্টারভিউয়ের নির্দেশও দেন পর্ষদকে। তবে চাকরিহারাদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই একতরফা ভাবে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এই আবহে আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে এই ৩২ হাজার শিক্ষক। তবে তাঁদের ফের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ নিতে হবে। মনে করা হচ্ছে চাকরি টিকিয়ে রাখতে তাঁদের এই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হতেই হবে।