'উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর স্বপ্নদীপ কুণ্ডু', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর স্বপ্নদীপ কুণ্ডু' - যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গাড়ি ঢুকতেই সেই স্লোগান উঠতে শুরু করে। হস্টেলেও আসেন রাজ্যপাল তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। শ্রদ্ধা জানান স্বপ্নদীপকে। তারইমধ্যে স্বপ্নদীপের ময়নাতদন্তের যে প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে জানানো হয়েছে, উপর থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মদ্যপান করেননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সূত্রের খবর, অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে যে স্বপ্নদীপ একেবারে স্বাভাবিক খাবার খেয়েছিলেন। তবে বুধবার খুব ভয় পেয়েছিলেন। বারবার বলছিলেন যে ‘আই অ্যাম নট আ গে’। তাহলে তাঁকে সমকামী বলে র্যাগিং করা হচ্ছিল কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আপাতত সেইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, যাদবপুরের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের হাতে আরও একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। যাদবপুরের মেন হস্টেলের একটি ব্লকে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে থাকতেন স্বপ্নদীপ। বুধবার যে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন, তা ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে জানানোর চেষ্টা করছিলেন বাকিরা। প্রাথমিকভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পেরেছিলেন তাঁরা। তবে ঘড়ির কাঁটা ১১ টা পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে ওই পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে স্বপ্নদীপ একাধিকবার শৌচাগারে যাচ্ছিলেন। একাধিবার বলছিলেন যে ‘আই অ্যাম নট আ গে।’
আরও পড়ুন: ‘আমি খুব চাপে আছি’, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার শেষ ফোনে শুনেছিল বাবা
সূত্রের খবর, পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে বুধবার রাত ১২ টা নাগাদ হস্টেলের তিনতলার ব্যালকনি থেকে স্বপ্নদীপ পড়ে যান। সেইসময় তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন এক পড়ুয়া। তবে নদিয়ার হাঁসখালির বগুলার ছেলে স্বপ্নদীপের হাত ধরতে পারেননি তিনি। হাত ফস্কে যায়। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর চারটে নাগাদ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও উপর থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। ভেঙে যায় পাঁজরের হাড় এবং কোমর। গুরুতর আঘাতের জেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
স্বপ্নদীপের পরিবারের দাবি, মেধাবী ছেলে আত্মহত্যা করেননি। বরং র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুণ্ডু। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাতে বাড়িতে ফোন করেছিলেন স্বপ্নদীপ। কথা বলেছিলেন মায়ের সঙ্গে। ফোনে স্বপ্নদীপের গলায় যেন একটা ভীতি, উৎকণ্ঠা ধরা পড়ছিল। স্বপ্নদীপ বলেছিলেন যে ‘আমি ভালো নেই মা।’ সেইসঙ্গে স্বপ্নদীপের মামা জানিয়েছেন, মা'কে দ্রুত যাদবপুরে আসতে বলেছিলেন ভাগ্নে। যিনি রবিবারই যাদবপুরের হস্টেলে থাকতে শুরু করেছিলেন। বাংলা বিভাগের রোজ ক্লাস করেছিলেন স্বপ্নদীপ। ক্লাসও উপভোগ করছিলেন বলে সূত্রের খবর।
শুধু স্বপ্নদীপের পরিবার নয়, এক সহপাঠীর প্রাণ চলে যাওয়ায় যাদবপুরের অন্দর থেকেও র্যাগিংয়ের তত্ত্ব উঠে আসছে। নিজেদের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া দাবি করে কেউ-কেউ জানিয়েছেন, তাঁদেরও র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। রীতিমতো মানসিক অত্যাচার চলত। সেই ঘটনায় আবার যাদবপুরের প্রাক্তনীদের নামও উঠে আসছে। যাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লেও বহাল তবিয়তে হস্টেলে এসে থাকতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে যাদবপুর থানা। লালবাজারও একাধিক পদক্ষেপ করছে।
তারইমধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাদবপুরে আসেন রাজ্যপাল। তিনি জানান, অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় এটা। এটা স্পষ্ট যে ভয় দেখানোর মতো কিছু হয়েছিল। তার ফলে মানসিক দিক থেকে চাপ তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং হস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে পুরো রহস্য উদঘাটন হবে।