করোনা নির্দেশিকা না-মানায় আক্রান্ত তরুণ ও তাঁর পরিবারকে চরম ভর্ৎসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বিকেলে নবান্নে এক অনুষ্ঠানে তাঁদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, প্রভাবশালীর পরিবারের সদস্য বলে বিদেশ থেকে ফিরে পরীক্ষা করাবো না, তা চলবে না।
বুধবার নবান্নে ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে কেনা ১৭৩টি অ্যাম্বুল্যান্সের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অ্যাম্বুল্যান্সগুলি সাংসদ তহবিলের টাকায় কেনা। বিতরণ করা হবে ক্লাব ও সমাজসেবী সংগঠনগুলির মধ্যে। সেই অনুষ্ঠানেই করোনা নিয়ে ফের একবার সতর্কতার বার্তা দেন মমতা। সঙ্গে বিধি না মানায় নাম না করে সমালোচনা করেন নবান্নের ওই আমলার।
এদিন মমতা বলেন, ‘যারাই বিদেশ থেকে আসছেন, প্রত্যেককে অনুরোধ নিজেদের একটা করে টেস্ট করান। আর ১৫ – ২৭ দিন সেলফ আইসোলেশনে থাকুন। এখানে কোনও ভিআইপি – এলআইপি নেই। যদি সংক্রমণের কোনও লক্ষণ না থাকে তাহলে এতেই ঠিক আছে।‘
মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘আর যদি দেখেন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আর আপনি কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো ঘুরে বেড়ালেন। তাতে আরও ৫,০০০ লোকের মধ্যে রোগটা ছড়িয়ে গেল। এর থেকে অবিবেচকের মতো কাজ আর কিছু হতে পারে না।‘
সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে সবার কাছে যেতে হয়। অফিসারকেও করতে হয়। সংবাদমাধ্যমকেও করতে হয়। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি আমাদেরও করতে হয়। আমরা সবাইকে বলব দূরত্ব বজায় রাখুন। একদম সামনাসামনি কথা বলা, সামনাসামনি মেশার দরকার নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজ করুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। শরীর খারাপ হলে রোগ দেখানো, এগুলো করুন।‘
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যারাই বিদেশ থেকে আসছেন, প্রত্যেককে অনুরোধ নিজেদের একটা করে টেস্ট করান। আর ১৫ – ২৭ দিন সেলফ আইসোলেশনে থাকুন। এখানে কোনও ভিআইপি – এলআইপি নেই। যদি সংক্রমণের কোনও লক্ষণ না থাকে তাহলে এতেই ঠিক আছে।' তাঁর কথায়, 'গত কয়েকদিনে ৯৫,০০০ বিদেশি কলকাতায় ফিরেছেন। যাঁরা আসছেন তাঁদের স্বাগত। কিন্তু অসুখটাকে স্বাগত জানাচ্ছি না।'
রোগ প্রতিকারে প্রত্যেকের বিচক্ষণতার ওপর জোর দেন মমতা। বলেন, 'অসুখটা আমারই হোক বা আপনারই হোক, প্লিজ দয়া করে দেখিয়ে নেবেন। আর নিজেদের আলাদা রাখবেন। এই যে বিদেশ থেকে ফিরে শপিং মলে বেড়াতে চলে গেলাম। সেখানে আমার সংস্পর্শে এসে আরও ৫০০ জন আক্রান্ত হল। হঠাৎ আমি একটা পার্কে চলে গেলাম আরও ৫০ জন আক্রান্ত হল। আমার পরিবারের কেউ খুব প্রভাবশালী তাই টেস্ট করলাম না, আমি এটাকে সাপোর্ট করি না।
তবে বিদেশ থেকে ফিরে প্রাথমিক ভাবে সুস্থ থাকলেও যে আশঙ্কা কমে না তা মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, 'অনেক সময় রোগটা প্রথমে বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমে টেমপারেচার মাপছে দেখছে টেমপারেচার নেই। আমাদের নিজেদের তো দেখা উচিত, আমি একটা জায়গা থেকে আসছি সেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি। আমি কেন চেষ্টা করব না আমাকে ঠিক রাখএবং আমার রোগ যেন অন্য জায়গায় না ছড়ায়। আমি কেন নিজেকে আইসোলেট করে রাখব না? সে যেই হোক, ভিভিআইপি – এলআইপি আমি সবাইকে বলব। কালকের যে ঘটনাটা ঘটেছে চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে আমাদের। ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টেও কী চেক করেছে আমি জানি না, ধরা পড়েনি। তার পর ফিরে এসেও আমি শুনেছি যে একদিন ডিলে করেছে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়িয়েছে। তার মানে কি, কত লোকের কনট্যাক্টে এসেছে। এই রোগটা তো কনট্যাক্টে আসলেই হচ্ছে।'