করোনাভাইরাস আবহে আর্থিক ধাক্কা সামলাতে বিজ্ঞাপনী খাতে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিল কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। স্মার্ট কার্ডের পরে এবার বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য মেট্রো স্টেশনের নাম এবং টোকেন ভাড়া দিতে চলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ের নিরিখে দিল্লি বা বেঙ্গালুরু মেট্রোর তুলনায় অনেকটা দেরিতে দৌড় শুরু করেও ক্রমশ সামনের সারিতে উঠে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে কলকাতা মেট্রো।
জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে দৈনিক সাত লাখ যাত্রীর ভিড় সামলাত মেট্রো। কোভিড পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানায় যাত্রী সংখ্যা একধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছে। কোপ পড়েছে সংস্থার আয়ে। তার উপরে বেড়েছে ব্যয়। মেট্রোর অপারেটিং রেশিয়ো এখন ২২৫। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করতে মেট্রোকে খরচ করতে হচ্ছে ২২৫ টাকা।
এই শহরে উত্তর–দক্ষিণ মেট্রোর মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে ২৪টি স্টেশন এবং ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর ছ'কিলোমিটার পথের সাতটি স্টেশনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে কলকাতা মেট্রোয় সংযোজিত হতে চলা বরাহনগর–দক্ষিণেশ্বর স্টেশনকেও যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
এবার ন'টি স্টেশনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের। সেই তালিকায় রয়েছে—বেলগাছিয়া, শোভাবাজার–সুতানুটি, চাঁদনি চক, ফুলবাগান, বেঙ্গল কেমিক্যাল, সিটি সেন্টার, সেন্ট্রাল পার্ক, করুণাময়ী এবং উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বরানগর। সেক্টর ফাইভ ও সল্টলেক স্টেডিয়ামকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে।
একইসঙ্গে আয় বাড়াতে টোকেনেও বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। অতিমারি আবহে বর্তমানে এই ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে যখন ফের টোকেন চালু হবে, তখন তার এক পিঠে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে বলে ভাবা হয়েছে। তার ফলে বাড়বে আয়।
স্টেশনের নাম ভাড়া দেওয়ার প্রাথমিক শর্তাবলীতে ঠিক হয়েছে, নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক সংস্থাকে একটি স্টেশনের নামের আগে বা পরে তাদের পণ্য বা সংস্থার নাম বসাতে দেওয়া হবে। সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য স্টেশন চত্বরে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে। যেখানে ওই সংস্থা বিজ্ঞাপন বা ভিডিয়োর দেখানোর সুযোগ মিলবে। পাঁচ বছরের জন্য স্টেশনভিত্তিক দরপত্র করা হয়েছে। তবে মেট্রোর ওয়েবসাইট, কামরায় ঘোষণা, মেট্রোর অ্যাপ বা সংস্থার মানচিত্রে কোথাও বরাতপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক সংস্থার নাম এখন ব্যবহার করা যাবে না। যে সব মেট্রো স্টেশনে নামের সঙ্গে মনীষী বা বিশিষ্টদের নাম জড়িয়ে আছে, সেখানে অবশ্য আপাতত এই নাম বদলের ভাবনা কার্যকর করা হচ্ছে না।
মেট্রো রেলের চিফ অপারেশনস ম্যানেজার সাত্যকি নাথ বলেন, ‘নতুন পরিকল্পনায় সাড়া মিলছে। যাত্রী ভাড়া বহির্ভূত খাতে আয় বৃদ্ধি হলে মেট্রোর আর্থিক উন্নতি হবে। পরিষেবাও আরও বাড়বে।’