দেশজুড়ে চাপের মুখে পড়ে এবং সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনায় শেষমেশ সব রাজ্যকে বিনামূল্যে টিকা দিতে রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে এবার টিকা নির্মাতাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনতে অগ্রিম বাবদ মেটানো ৭০ কোটি টাকা ফেরত চাইল নবান্ন। বাতিল করল ২২ লক্ষ টিকার ডোজের বরাতও। কেন্দ্রকে চিঠি লিখে সেকথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ব্যাপক সমালোচনার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, সব রাজ্যকেই বিনামূল্যে টিকা দেবে কেন্দ্র। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কেন্দ্রের সেই ঘোষণার পরেই কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন কেনার বরাত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দিতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। তাই ভ্যাকসিন কিনতে উৎপাদক সংস্থা দু’টিকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। ক’দিন আগেই তার প্রথম কনসাইনমেন্টে সাড়ে চার লক্ষ ডোজ রাজ্যে এসেছে। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার তা নিজেদের হাতে না নিয়ে কেন্দ্রীয় স্টোরে পাঠিয়েছে। বাকি ডোজের আর দরকার নেই জানিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে নবান্ন। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘বরাত বাতিলের পরে টিকার জন্য অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংস্থা দু’টি কবে বরাতের টাকা ফেরত দেবে, তা তারা এখনও কিছু জানায়নি।’
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লাগাতার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে দেশবাসীর জন্য বিনামূল্যের টিকার দাবি জানিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে টনক নড়েনি কেন্দ্রের। বাধ্য হয়েই রাজ্যবাসীর স্বার্থে সরাসরি টিকা নির্মাতাদের কাছ থেকেই ভ্যাকসিন কেনা শুরু করে বাংলা। অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরা বিনামূল্যে টিকাকরণের দাবিতে সোচ্চার হলে ধাক্কা খায় মোদী সরকার। তখন আগামী ২১ জুন থেকে ১৮ ঊর্ধ্ব সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, মে মাসে কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। জুন মাসে রাজ্যের পক্ষ থেকে দু’টি টিকা মিলিয়ে আরও ২২ লক্ষ ডোজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে সাড়ে ১৮ লক্ষ ডোজ কোভিশিল্ড এবং সাড়ে তিন লক্ষ কোভ্যাক্সিন ছিল। প্রতি ডোজ় ৩০০ টাকা করে সাড়ে ১৮ লক্ষ কোভিশিল্ডের জন্য প্রায় ৫৮ কোটি (পাঁচ শতাংশ জিএসটি–সহ) এবং সাড়ে তিন লক্ষ ডোজ কোভ্যাক্সিনের জন্য ৪০০ টাকা করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা (পাঁচ শতাংশ জিএসটি–সহ) অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।
কেন্দ্র বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে রাজি না হওয়ায়, জুন মাসে রাজ্যবাসীর জন্য ফের নির্মাতা সংস্থার দ্বারস্থ হয় নবান্ন। কেন্দ্র চলতি মাসের জন্য ২২ লক্ষ ডোজ স্থির করে দেয়। সেইমতো অগ্রিম বাবদ ৭০ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয় রাজ্য। কিন্তু তারপরই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ২১ জুন থেকে দেশব্যাপী বিনামূল্যে টিকাকরণের কথা ঘোষণা করেন। ফলে রাজ্যও ওই টাকা ফেরত চাওয়ার পথেই হাঁটল। চলতি মাসে কেন্দ্রের কাছ থেকে কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড মিলিয়ে ১৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ডোজ টিকা মিলেছে। এই মাসের শেষে কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও ২৬ লক্ষ ১২ হাজার ডোজ় টিকা আসতে পারে।