কলকাতায় পৌঁছে বিজেপির দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে পালটা তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধিকা নিরঞ্জন জ্যোতি। শনিবার ঝটিকা সফলে কলকাতা পৌঁছে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ২ পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সদর্পে বলেন, আমি বুন্দেলখণ্ডের মেয়ে। যে বুন্দেলখণ্ডে অবস্থিত ঝাঁসি। আমি পিছনের দরজা দিয়ে পালাই না।
গত ৩ অক্টোবর দিল্লির কৃষি ভবনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে নিরঞ্জন জ্যোতি বলেন, তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই আমি দিল্লি গিয়েছিলাম। আমার অনেক কাজ ছিল, সেই সব ফেলে গিয়েছিলাম। আমি তাদের বলি, আপনারা আগে ঠিক করুন, কতজন দেখা করবেন? ওরা বলেন, আমরা ৫ জন দেখা করব, কারণ তার থেকে বেশি লোক থাকলে ভালো করে কথা হবে না। ১৫ মিনিট পরে আমাকে জানাল, ১০ জন দেখা করব। আমি বলি, ১০ জন চলে আসুন, আমার কোনও আপত্তি নেই। তার পর বললেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসব। আরও ১৫ মিনিট পরে ৭টা নাগাদ আমাকে জানানো হয় আগে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি বলি না, আগে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হবে। তার আধ ঘণ্টা পরে, সাড়ে ৭টার পরে আমার কাছে খবর আসে যে সমস্ত সাংসদ দেখা করতে চান। আমি বললাম, সবাই চলে আসুন। আমার কোনও সমস্যা নেই’।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘এর পর মহুয়া মিত্র জি আমার পার্সোন্যাল সেক্রেটারির ঘরে যান ও বলেন আমি একা দেখা করতে চাই। আমি তাঁকে বলি, আপনি তো যে কোনও সময় একা দেখা করতে পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু আজ যে বিষয় নিয়ে আপনারা গোটা প্রতিনিধিদল এসেছেন তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে চাই। তার পর আমার সঙ্গে ২ জন দেখা করতে আসেন। তার পর রাজ্যসভার সাংসদরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমি তাদের স্পষ্ট জানাই, আমি আজ কারও সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করব না। আজ টেবিলে মুখোমুখি বসে মনরেগার দেনাপাওনা নিয়ে আলোচনা হবে। এর পর ৮টা নাগাদ আমার কাছে খবর আসে যে তৃণমূলের সমস্ত সাংসদরা দেখা করতে আসছেন। আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ৮টা ২০ মিনিটে আবার আমাকে জানানো হয়, আগে জনতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। আমি বলি, জনতা তো আমারই। পশ্চিমবঙ্গ আমার কাছে পর নয়। কিন্তু যে বিষয়কে নিয়ে আপনারা এখানে এসেছেন প্রথমে সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ ওরা আমাকে জানান, জনগণের সঙ্গে দেখা না করলে আমরাও দেখা করব না’।
এর পরই গর্জে ওঠেন তিনি। বলেন, ‘যে ভাবে মাননীয় মহুয়াজি মাননীয় মোদীজিকে ও আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন, সেজন্য আমাকে আমার অফিসের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করাতে হয়েছে। আমি আড়াই ঘণ্টা অফিসে বসেছিলাম। আমার দেখা করার মতলব না থাকলে কাজ ফেলে দিল্লি গিয়েছিলাম কেন? কেন অফিসে অপেক্ষা করলাম?’
তৃণমূলকে নিরঞ্জন জ্যোতির জবাব, ‘আমি না কি পিছনের গেট দিয়ে পালিয়েছি। আমি ৪ নম্বর গেট দিয়েই সব সময় যাতায়াত করি। ৪ নম্বর গেটের কাছে আমি দফতর। কমিউন্ট গুন্ডাদের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আজ সেই গুন্ডারাই তৃণমূলের সম্পদ। এখানে কোনও নারীর সুরক্ষা নেই’।
সাংবাদিক বৈঠকের একেবারে শেষে তিনি বলেন, ‘আমি বুন্দেলখণ্ডের মেয়ে। যে বুন্দেলখণ্ডে অবস্থিত ঝাঁসি। আমি পিছনের দরজা দিয়ে পালাই না। মুখোমুখি হওয়ার হিম্মত রাখি।’