রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার শংকর আঢ্যকে আদালতে পেশ করে বিস্ফোরক দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তদন্তকারীদের দাবি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের নামে প্রায় ২০০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূলি পুরপ্রধান। এর মধ্যে প্রায় ১০০০০ কোটি টাকা রেশন দুর্নীতির। দুপক্ষের সওয়াল শুনে এদিন ধৃত তৃণমূল নেতাকে ১৪ দিনের জন্য ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
এদিন আদালতে ইডি বলে, শংকর আঢ্যর ১৯টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের নামে তিনি দুর্নীতির ২০০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এর মধ্যে ২৭০০ কোটি টাকা গিয়েছে দুবাইয়ে। এই টাকার মধ্যে ৯ – ১০ হাজার কোটি টাকা রেশন দুর্নীতির। সীমান্তবর্তী এলাকায় শংকর আঢ্যর নেতৃত্বে বিদেশে টাকা পাচারের একটি চক্র চলে বলে জানিয়েছে ইডি। হাওয়ালার মাধ্যমেও টাকা যায় বিদেশে।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে প্রথমে ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির হদিশ পেয়েছিল ইডি। জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারির পর সেই অংক বেড়ে হয় ৪৫০ কোটি। এবার ইডির মুখে ১০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির কথা শুনে বিচারক এজলাসে বলেন, কে বলবে পশ্চিমবঙ্গ একটা গরিব রাজ্য!
এদিন শংকর আঢ্যর আইনজীবী বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাঁকে হেনস্থা করছে ইডি। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি বিচারক।
শনিবার আদালতে আরও ১টি বিস্ফোরক দাবি করে ED. আদালতে ইডি জানিয়েছে, SSKM হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিককে একাধিক চিঠি লিখেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গত ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়র কেবিন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তার পরদিনই হাসপাতালে হাজির হন জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে। দেখা করেন বাবার সঙ্গে। মেয়ের সঙ্গে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়র দাদাও।
আদালতে ইডি জানিয়েছে, হাসপাতালের কেবিনে CCTV ক্যামেরা খোলা হতেই মেয়েকে চিঠি লেখেন জ্যোতিপ্রিয়। হাসপাতালের বিশেষ দূত মারফৎ সেই চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল মেয়ের কাছে। তবে তার আগে চিঠি কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে চলে আসে। সেখান থেকে চিঠি পৌঁছয় ইডির আধিকারিকদের হাতে। জ্যোতিপ্রিয়র লেখা সেই চিঠিতে শংকর আঢ্য ছাড়াও রয়েছে তৃণমূলের একাধিক নেতার নাম। তবে তদন্তের স্বার্থে সেই নাম প্রকাশ্য আদালতে জানায়নি ইডি। কার কাছে জ্যোতিপ্রিয়র কত টাকা পাওনা রয়েছে সেই তালিকা ছিল সেই চিঠিতে।
শুক্রবার রাতে শংকর আঢ্যের গ্রেফতারির পর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, ‘সারাদিন ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন করল। রাত ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ ইডির এক আধিকারিক এসে বললেন জ্যোতিপ্রিয় কোন কাগজে ওর নাম বলেছে। আপনাকে গ্রেফতার করা হল। আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। রেশন দুর্নীতির কিছু ও জানেই না।’
রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনগাঁয় শংকর আঢ্যর একাধিক ঠিকানায় হানা দেয় ইডি। প্রায় ১৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর রাত ১২টা নাগাদ গ্রেফতার হন শংকর আঢ্য। গাড়ি করে শংকর আঢ্যকে নিয়ে বেরনোর সময় ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা চালায় শংকরের অনুগামীরা। হামলায় ভাঙে ইডির গাড়ির কাচ। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় শংকর আঢ্য বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। তদন্তকারীদের বলেছি যেন সুবিচার হয়।’