সম্প্রতি এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলই বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই আবহে একসঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার জন চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই 'অযোগ্য'। তবে এই রায়ে কপাল পুড়েছে 'যোগ্য' চাকরিপ্রাপকদেরও। এই পরিস্থিতিতে যোগ্য চাকরিহারাদের এবার কী হবে? এই অনিশ্চয়তার ঘন কালো মেঘের আড়ালে আলোর দিশা পেতে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের দ্বারস্থ হলেন অনেক চাকরিহারা। আর সেই সব চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের পরই মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন যে ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। এদিকে গতকাল মধ্য শিক্ষা পর্ষদও চাকরিহারা শিক্ষকদের জানাল, শীর্ষ আদালতে এই নিয়ে যাবে তারা। এর জন্যে আইনি পরামর্শ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
এর আগে এই ইস্যুতে এসএসসি সভাপতি সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেছিলেন, 'এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সিবিআই তদন্ত চলেছে। ৫০০০ নিয়োগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল সিবিআই। এগুলির নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ ছিল। বাকি প্রায় ১৯ হাজারের নামে কী অভিযোগ? তাদের কেন চাকরি গেল? এখনও পরিস্কার নয়। তাই রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছি। স্কুলে শুন্যতা কীভাবে পূরণ হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমি আদালতের এই রায়ে অসন্তুষ্ট। রায়ের কপি হাতে পেয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মুভ করব। ওএমআর শিটের পুনর্মূল্যায়ণ করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও গাইডলাইন নেই। ৩৫০টির বেশি মামলা হয়েছে। ফলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'নতুন নিয়োগ শুরু নিয়ে বা তার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। নিয়োগ করাই তো আমাদের কাজ। সরকার নির্দেশ দিলে প্রক্রিয়া শুরু করব। কিন্তু আদালত জানিয়েছে ফ্রেশ নিয়োগ নয়। ওএমআর পুনর্মূল্যায়ণ। আমরা সিবিআইয়ের থেকে হার্ড ডিস্ক নিয়ে দেখব সেখানে কী কী পাওয়া যায়।'
প্রসঙ্গত, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সবির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান করে বলে, ২০১৬ সালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দ্বাদশে নিয়োগ পাওয়া এসএসসি চাকরিপ্রাপকদের সবার চাকরি বাতিল হবে। পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলে, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের চাকরি বৈধ হতে পারে না। অন্যদিকে চাকরিহারাদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে সব বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রাপ্ত বেতনের ওপর ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে চাকরিহারাদের। এর জন্যে চাকরিহারাদের ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে হাই কোর্ট। এই টাকা জেলাশাসকের কাছে জমা করতে হবে তাঁদের। পরে জেলাশাসক পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা হাই কোর্টে জমা দেবেন।
অপরদিকে এসএসসি-কে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুরও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওমএমআর শিট পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলল আদালত। এর পাশাপাশি এসএসসির সার্ভারে দ্রুত ওএমআর শিট আপলোড করতে বলেছে হাই কোর্ট। এদিকে হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত জারি রাখবে সিবিআই। নির্দেশে বলা হয়েছে, 'যাকে প্রয়োজন, তাকেই হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই'।