বিধায়ক পদও ছেড়ে দিতে চান রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে এই খবর মিলেছে। আপাতত তিনি বিধায়ক থাকবেন এবং জনসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তারপর ছেড়ে দেবেন বিধায়ক পদও। সূত্রের খবর, রবিবার শুভেন্দুর প্রথম জনসভা করার কথা। স্বাধীনতা সংগ্রামী রঞ্জিত বয়ালের স্মরণে ওই সভা হবে মহিষাদলে। এখন দেখার, রবিবার সভা করলে তিনি সেখানে কী বলেন, সভাটি তিনি ‘তৃণমূল বিধায়ক’ হিসেবে করেন কি না, সেটাও দেখার।
এখনও দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। দলনেত্রী মমতা চাইছেন না, আলোচনার দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে যাক। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন ‘অরাজনৈতিক’ সভায় যে মন্তব্য করছিলেন, তা নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল। সেই সব ‘কাঁটা’ এড়াতেই তিনি মন্ত্রিত্ব–সহ সমস্ত সরকারি পদ ছেড়ে দিয়েছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শুভেন্দু–অনুগামীর কথায়, ‘অনেকেই জানেন না যে, দাদার আরএসএস ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। উনি ছোটবেলায় তিন শিক্ষাবর্গ আরএসএস করেছেন। রাজ্য বিজেপির অনেকের চেয়ে তিনি সংঘ পরিবারের নিয়মনীতি ভাল বোঝেন।’ মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর শুভেন্দু প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। আপাতত তিনি কোনও মন্তব্য করবেনও না বলে খবর। তবে শুভেন্দু নিজেও ‘নীতিগতভাবে’ বিধায়ক পদে থাকাকালীন কোনও ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিতে চান না।
উল্লেখ্য, শুভেন্দু রাজ্যের তিনটি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ছেড়ে-যাওয়া দফতরগুলির দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া তাঁর সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে ছিলেন দলের শীর্ষনেতা সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত ওই তিনটি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই থাকবে।
সূত্রের খবর, শুভেন্দু দল ছাড়লে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অধিকারী পরিবারের বাকি দুই সাংসদ শিশির এবং দিব্যেন্দুর কাছে তাঁদের অবস্থান জানতে চাওয়া হতে পারে। আবার শুভেন্দুর সঙ্গে মিটমাট হয়ে গেলে তাঁকে আবার দফতর ফিরিয়ে দেওয়া তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার। এখানে মুকুল রায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সিদ্ধান্তের মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে এখন বিজেপিতে। দল ছাড়ার আগে মুকুলও রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার পর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। শুভেন্দুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় মুকুল বলেন, ‘শুভেন্দুর পদত্যাগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই প্রজন্মে শুভেন্দু গণ–আন্দোলনের ফসল। ও আমাদের সঙ্গে যোগ দিলে আমাদের পক্ষেও ভালো। ওর পক্ষেও ভালো। শুভেন্দু আমাদের সঙ্গে এলে আমরা সকলে মিলেই ওকে স্বাগত জানাব।’