জিডিপি-র নিরিখে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। এই নিয়ে যথেষ্ট প্রচার করেন দেশের শাসক দল। ভারতের তরুণ জনসংখ্যা দেশের ভবিষ্যত, প্রধান স্তম্ভ, এই কথাও উঠে আসে বারবার। কিন্তু বাস্তবে কী এই যুব সম্প্রদায়কে যথার্থ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারছে দেশ। এই সংক্রান্ত জরুরি প্রশ্ন উঠে এসেছে লেবার মার্কেট নিয়ে আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে ২৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪২ শতাংশ স্নাতক কর্মহীন কোভিড-১৯-র পরে। এছাড়াও যারা কাজ পেয়েছেন, তাদের যোগ্যতা ও কাজের মানের মধ্যে অনেকটা ফারাক রয়েছে বলে ‘State of Working India 2023: Social Identities and Labour Market Outcomes’ বলে এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। সরকারি ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস (এনএসও)-র দ্বারা করা পিরিয়়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (২০২১-২২)-এর ডেটা ব্যবহার করেই এই তথ্য জানিয়েছে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে ২৫ বছরের স্নাতকদের মধ্যে ৪২ শতাংশ বেকার হলেও তারা যখন ৩৫ বছরের ওপরের মানুষদের মধ্যে দেখছেন, সেখানে এটি পাঁচ শতাংশের কম। অর্থাৎ ধীরে ধীরে মানুষ চাকরি ঠিকই পেয়ে যাচ্ছেন। তবে আদৌ সেটা পছন্দের কাজ বা তাদের যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই চাকরি কিনা, সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে চার্টে যে যারা স্নাতক নন তাদের মধ্যে অনেক কম লোক কর্মহীন কম বয়সে। অনুমেয় যে তারা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বড় চাকরি পাওয়ার আশায় ঘরে বসে থাকছেন স্নাতকরা।
ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়বে ভালো মোটা মাইনের চাকরি, এমন যারা মনে করেন তাদের জন্য খারাপ খবর দিয়েছে এই রিপোর্ট। তাদের মতে, ১৯৯০ থেকে যে ডেটা তাতে দেখা যাচ্ছে অকৃষিক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধি ও অকৃষিজাত কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মধ্যে সেরকম কোনও সমানুপাতিক সম্পর্ক নেই। তবে ২০১৪ থেকে ২০১৯-এ মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক দেখা যাচ্ছিন। তবে কোভিডে সেই ছন্দ ফের কেটে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে পরিসংখ্যান। প্রসঙ্গত, গত সাধারণ নির্বাচনের আগে আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল যে তার আগের দুই বছরে ৫০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে। এটি নোটবন্দির কারণে হয়েছিল বলেই অনেক বিশেষজ্ঞর অভিমত। তবে ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়েনি। বিপুল মার্জিনে পুনর্নিবাচিত হয়েছিল মোদী সরকার।
এবারের লড়াই যদিও আরেকটু কঠিন, কারণ কোভিডে অসংগঠিত ক্ষেত্রে আরও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য হালেই সরকার ১.৮ লক্ষ কোটির প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে। আশা হচ্ছে যে অর্থনীতির চাকা ঘুরলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, মানুষের হাতে টাকা আসবে, তাতে জিনিসের চাহিদা বাড়বে। তবে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে এখনও সেভাবে আশানুরূপ কোনও উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। সরকারের খরচার ওপর নির্ভর করেই অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অসংগঠিত ক্ষেত্রে ও নির্মাণক্ষেত্র বড় সংখ্যক মানুষকে কর্মসংস্থান জোগাচ্ছে বলে রিপোর্টে দাবি।
তবে কর্মক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষদের যে আর্থিক বৈষম্য ছিল, সেটা কিছুটা কমেছে বলে জানা গিয়েছে রিপোর্ট থেকে। ২০০৪ এ পুরুষদের মোট মাইনের মাত্র ৭০ শতাংশ পেতেন মহিলারা। সেটা ২০১৭-এ বেড়ে হয়েছে ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর বাদেও সেই মাত্রা অপরিবর্তিত। এই রিপোর্ট নিয়ে যদিও সরকারের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।