প্রায় এক দশক আগে শুভম দুবের কাছে একজোড়া ব্যাটিং গ্লাভস কেনার মতো টাকাও ছিল না। নাগপুরের কামাল স্কোয়ারে একটি পানের দোকান চালান তাঁর বাবা বদ্রীপ্রসাদ। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে নুন আনতে পান্তায় ফোরায় দশা। সেখানে ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন লালন করাটা একটু বেশিই বাহুল্যের ছিল দুবে পরিবারে। কিন্তু সেই ক্রিকেটই বদলে দিয়েছে শুভম দুবের জীবন। পানওয়ালার ছেলে রাতারাতি কোটিপতি।
মঙ্গলবার হার্ড হিটিং ব্যাটারকে রাজস্থান রয়্যালস ২০২৪ আইপিএলের জন্য ৫.৮০ কোটিতে কিনে নিয়েছেন। আর এতে আবেগে ভাসছে দুবে পরিবার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজস্থান রয়্যালস শুভমকে কিনে নেওয়ার পর, তাঁর বাড়িতে একেবারে ছিল শুভানুধ্যায়ীদের উপচে পড়া ভিড়। শুভম নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি তাঁকে এত টাকা দিয়ে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি দল কিনতে পারে! যেখানে তাঁর বেসপ্রাইস ছিল ২০ লাখ।
শুভম দুবে বলেন, ‘এটি একটি অবাস্তব অনুভূতি। আমি সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে (SMAT) ভালো খেলেছি। তাই নিলামে কোনও দল আমাকে যে নিতে পারে, সেই বিষয়ে আশাবাদী ছিলাম। তবে সত্যি বলতে, আমি এত বড় অঙ্কের আশা করিনি।’
শুভম দুবে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির সাত ম্যাচে ১৮৭.২৮ স্ট্রাইক রেটে এবং ৭৩.৭৬-এর আশ্চর্যজনক গড়ে ২২২ রান করেছেন। তিনি তাঁর সাতটি ইনিংসে ১০টি চার এবং ১৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বিদর্ভের হয়ে যৌথ ভাবে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি ফিফটি করেছেন। ১৮ বাংলার বিরুদ্ধে তিনি হাফসেঞ্চুরি করে নজির গড়েন। বিদর্ভের হয়ে ২৯০ রান তাড়া করতে নেমে তিনি ২০ বলে ঝোড়ো ৫৮ রান করেন। তিনটি চার এবং ছ'টি ছক্কা হাঁকান।
তবে সাফল্যের পরেও দুবে তাঁর লড়াই এবং তাঁকে যাঁরা খারাপ সময়ে সাহায্য করেছেন, তাঁদের ভুলে যাননি। আর্থিক দুরাবস্থায় যাঁরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের কথা অকপটে বলেছেন শুভমন দুবে। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর এক সময়ের মেন্টর প্রয়াত সুদীপ জয়সওয়ালকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘যে সময়ে আমাদের আর্থিক অবস্থা সত্যিই খারাপ ছিল, সুদীপ স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তাঁর সমর্থন ছাড়া, আমি আমার জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারতাম না।’
সুদীপ জয়সওয়াল একজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট একাদশ পরিচালনা করতেন তিনি। এই ক্লাবটি অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে সাহায্য করেছিল, যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। ২০২১ সালে ৫৩ বছর বয়সেই সুদীপ জয়সওয়াল কোভিড-এ প্রয়াত হন।
দুবে তাঁর ছেলেবেলার কোচ রোহিত কেসারওয়ারকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার জন্য সেই সময়ে একটি গ্লাভস কেনাও সম্ভব ছিল না। তিনি আমাকে একটি নতুন ব্যাট এবং কিট দিয়েছিলেন। আমাকে অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২৩ এবং ‘এ’ বিভাগের দলের একাদশে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। উনি না থাকলে আমি পারতামই না। এমন কী বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসিএ) দলেও না হলে জায়গা পেতাম না।’
রাজস্থান রয়্যালসের রোমি ভিন্ডার বলেছেন, দুবে কয়েক বছর ধরেই ফ্র্যাঞ্চাইজির রাডারে ছিলেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় তিনি দাবি করেছেন, ‘তিনি (শুভম দুবে) তাঁর বর্তমান পরামর্শদাতা ইরফান রজ্জাকের সঙ্গে টালেগাঁওতে রাজস্থান রয়্যালস অ্যাকাডেমিতে কয়েক বার গিয়েছিলেন। ওঁর প্রচুর প্রতিভা রয়েছে।’
দুবে (রাজস্থান রয়্যালস) ছাড়াও ২০২৪ আইপিএলের জন্য ছয় বিদর্ভ খেলোয়াড় বিভিন্ন দলে সুযোগ পেয়েছেন। এঁরা হলেন- উমেশ যাদব (গুজরাট টাইটান্স), দর্শন নালকান্দে (গুজরাট টাইটান্স), জিতেশ শর্মা (পঞ্জাব কিংস), অথর্ব তাইদে (পঞ্জাব কিংস), যশ ঠাকুর (লখনউ সুপার জায়ান্টস)।