এবার একদিনের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বে ভারত। ৫ অক্টোবর শুরু বিশ্বকাপ। ফাইনাল ১৯ নভেম্বর। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড। যে দুটি দল গত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে, এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নেই আয়োজক দেশ। ১৯৯৬ সালে শেষবার সেটা হয়েছিল। সেই ম্যাচেও মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। খেলা হয়েছিল সেই আমদাবাদে। এবার ফাইনালের ভেন্যুও আমদাবাদ। একটি সেমিফাইনাল আয়োজনের দায়িত্বে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স (দ্বিতীয় সেমিফাইনাল - ১৬ নভেম্বর)। অপর সেমিফাইনাল আয়োজনের দায়িত্বে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে (প্রথম সেমিফাইনাল - ১৫ নভেম্বর)।
২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব যে ভারত পেয়েছে, সেটার জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়েছে। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য আগ্রহী দেশগুলির দরপত্র পরীক্ষা করে টুর্নামেন্টের আয়োজকদের জন্য ভোট দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটি। ইংল্যান্ড প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার ইংল্যান্ডের বাইরে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্ট হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানে ।
১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ড উদ্বোধনী ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করছিল। ১৯৭৫ সালের ৭ জুন টুর্নামেন্টটি শুরু হয়েছিল। প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রুডেনশিয়াল কাপ নামে পরিচিতি ছিল। ৬০ ওভারের খেলা ছিল। একটা সময়ে টুর্নামেন্টটি সাদা পোশাকে ও লাল বলে দিনের বেলা হত। প্রথম টুর্নামেন্টে আটটি দল অংশগ্রহণ করেছিল। দলগুলি হল - অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সে সময়ের ছয়টি টেস্ট খেলিয়ে দেশ), শ্রীলঙ্কা এবং পূর্ব আফ্রিকার একটি যৌথ দল এই খেলায় অংশগ্রহণ করত। বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি। লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে টুর্নামেন্টটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল।
১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু হয়েছিল। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত-পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল শ্রীলঙ্কা ও কানাডা। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারপর আইসিসি প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপের আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপে ৩০ গজ (২৭ মিটার) দূরে একটি ফিল্ডিং সার্কেল চালু হয়েছিল। বৃত্তের ভিতর চারজন ফিল্ডার ফিল্ডিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। দলগুলো নক আউটে যাওয়ার আগে দু'বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কপিল দেবের ভারত।
এরপর সময়টা ছিল ১৯৮৭ সাল। প্রথমবার যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল। তারপর থেকে অধিকাংশ বিশ্বকাপই যৌথভাবে আয়োজিত হয়েছে। ১৯৯৬ সাল, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে যৌথভাবে আয়োজিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়া যৌথভাবে আয়োজন করে। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে সাত রানে হারিয়েছিলেন অজিরা। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সবথেকে কম ব্যবধানের ফাইনাল জয়ের নজির তৈরি হয়েছিল।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশকাপে প্রথমবারের মতো রঙিন পোশাক ও সাদা বলে খেলা শুরু হয়েছিল। এছাড়াও দিনরাতের ম্যাচ এবং ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার নিয়মে পরিবর্তন করা হয়েছিল। বর্ণবাদী শাসনের পতন হয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বয়কটের সমাপ্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। পাকিস্তান টুর্নামেন্টের হতাশাজনক শুরু করার পর শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করেছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে চ্যম্পিয়ন হয়েছিল।
India
Rohit SharmaBatsman
Shreyas IyerBatsman
Shubman GillBatsman
Suryakumar YadavBatsman
Virat KohliBatsman
Ravichandran AshwinAll-Rounder
Ravindra JadejaAll-Rounder
Shardul ThakurAll-Rounder
Ishan KishanWicket Keeper
KL RahulWicket Keeper
Jasprit BumrahBowler
Kuldeep YadavBowler
Mohammed ShamiBowler
Mohammed SirajBowler
Prasidh KrishnaBowler
১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বারের মত এশিয়ায় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা গ্রুপ পর্বের কয়েকটি ম্যাচ আয়োজন করেছিল। সেমিফাইনালে ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। লাহোরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সাত উইকেটে পরাজিত করেছিল শ্রীলঙ্কা। জিতেছিল প্রথম বিশ্বকাপ।
এরপরে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার ট্রেবল জয়ের পর্ব (১৯৯৯ সাল, ২০০৩ সাল এবং ২০০৭ সাল)। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড ছাড়াও কয়েকটি ম্যাচ স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস এবং নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১২টি দল বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ টাই হয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সুপার সিক্সে শীর্ষস্থানে থাকায় ফাইনালে উঠেছিল। ফাইনালে পাকিস্তানকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল এবং তারপরে ২০ ওভারেরও কম ওভারে ব্যাটিং করে আট উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৯ সালের ট্রফি জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
এরপরে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ে এবং কেনিয়া ২০০৩ বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৪ করা হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিল কেনিয়া। নিউজিল্যান্ড নিরাপত্তার কারণে কেনিয়ায় খেলতে চায়নি। ফলে কেনিয়া প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছিল। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দুই উইকেট হারিয়ে ৩৫৯ রান তুলে রেকর্ড গড়েছিল। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ১২৫ রানে হারিয়ে দিয়েছিল। বিশ্বকাপে ফাইনালে রানের দিক থেকে হারের বিচারে এটা সর্বোচ্চ ব্যবধান ছিল।
এরপরে এসেছিল ২০০৭ সাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয়ছিল বিশ্বকাপ।বিশ্বকাপে ১৬টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে (ডার্ক অ্যান্ড লুইস মেথড) ৫৩ রানে পরাজিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে টানা ২৯ ম্যাচ অপরাজিত ছিল। এছাড়াও টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
এরপরের বিশ্বকাপটি বিশ্বকাপ ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে আয়োজন করেছিল। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানে বিশ্বকাপে আয়োজন বাতিল করা হয়েছিল। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমানো হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলে বিশ্বকাপে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছিল। মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ছয় উইকেটে পরাজিত করে ভারত দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল। প্রথমবারের মতো কোনও দেশ ঘরের মাটিতে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এরপর অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে ২০১৫ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল। ১৪টি দল এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল। টুর্নামেন্টে মোট তিনটি জয় নিয়ে আয়ারল্যান্ড সর্বাধিক সফল সহযোগী দেশ ছিল। নিউজিল্যান্ড রোমাঞ্চকর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল।
এরপর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে দ্বাদশ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমিয়ে ১০-এ আনা হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে রিজার্ভের দিনে প্রথম সেমিফাইনাল খেলা হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে পরাজিত করেছিল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল। প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। সুপার ওভারে গড়িয়েছিল ফাইনাল। দু'দলই ১৫ রান করেছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বাউন্ডারি সংখ্যা কম হওয়ায় ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল।
প্রশ্নোত্তরে বিশ্বকাপ
ভারতের বিশ্বকাপের দলে এবার কতজন বাঁ-হাত ব্যাটার আছেন?
ভারতীয় দলে মোট চারজন বাঁ-হাতি ব্যাটার আছে। তাঁদের মধ্যে প্রকৃত ব্যাটার একজন - ইশান কিষান। রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল অলরাউন্ডার। কুলদীপ যাদব।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে কত রান করেছিলেন শাকিব আল হাসান?
আট ম্যাচে ৬০৬ রান করেছিলেন। সর্বোচ্চ করেছিলেন অপরাজিত ১২৪ রান। সঙ্গে ১১টি উইকেট নিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় কি এবার বিশ্বকাপের দলে আছেন?
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। এবারও নিউজিল্যান্ডের দলে আছেন।