রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সহসভাপতি সুব্রত বক্সী। চিঠিতে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, বারংবার নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভাঙছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুব্রত বক্সী। উল্লেখ্য, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজনৈতিক হিংসায় মৃত নেতাকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যপাল। হাসপাতালে গিয়ে জখম তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেন। এরপর ট্রেনে করে গতকাল সকালে কলকাতায় ফিরেই সোজা চলে গিয়েছিলেন বাসন্তী। সেখানে গত শনিবার খুন হয়েছিলেন এক যুব তৃণমূল নেতা। এদিকে রাজভবনে 'পিস রুম' খুলেছেন রাজ্যপাল। এই কোনওটাই ভালো চোখে দেখছে না শাসকদল।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন। পাশাপাশি সুব্রত বক্সী চিঠিতে লিখেছেন, 'নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি ভবনে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাজ্যপাল।' উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ সফরে সার্কিট হাউজ ও অন্যান্য সরকারি ভবনে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যপাল। সুব্রত বক্সীর কথায়, রাজ্যপালের এহেন পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন ২০০৩-এর পরিপন্থী। এদিকে বারংবার রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকেও তলব করেছিলেন সিভি আনন্দ বোস। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা রাজ্যপালের কাম্য নয়।
এদিকে ঘাসফুল শিবিরের রাজ্যপালকে নিয়ে আরও অভিযোগ রয়েছে। নিজের চিঠিতে সুব্রতবাবু দাবি করেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই বিজেপি নেতাদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এদিকে রাজ্যপাল বিগত দিনে বিডিওদের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই কোনওটাই রাজ্যপালের করা উচিত হয়নি বলে মত সুব্রত বক্সীর। এদিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর 'নজরদারি' চালাতে রাজভবনে খোলা কন্ট্রোলরুম রীতিবিরুদ্ধ বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতার।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট বাজার পর থেকেই 'সক্রিয়' হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শাসকদলের আপত্তি সত্ত্বেও হিংসা কবলিত ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। সদ্য উত্তরবঙ্গ সফরেও যান তিনি। সেখানে রাজনৈতিক হিংসার শিকার কর্মী ও পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই সফর শেষে আজ সকালে বিমানে করে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল রাজ্যপালের। তবে তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করে ট্রেনে ফেরেন শহরে। বিমানে থাকলে বেশ কিছুক্ষণ ফোন বন্ধ রাখতে হবে, সেই কারণেই নাকি তিনি ট্রেনে যাত্রা করেন। এদিকে যাত্রাপথে তিনি বাসন্তীতে নিহত যুব তৃণমূল কর্মীর শোকাহত পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে। মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন আনন্দ বোস। পরে শিয়ালদায় নেমেই বাসন্তীর উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্যপাল। সেখানে গিয়ে মৃত যুব তৃণমূল কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।