পাঁচ বছর আগে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হাত উড়ে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার একরত্তি পৌলমীর। তখন রাজ্যজুড়ে চলছিল পঞ্চায়েত ভোট। তারিখটা ছিল ২০১৮ সালের ২০শে এপ্রিল। পাঁচ বছর পর আবার রাজ্যে সেই পঞ্চায়েত ভোট। মাঝখানে এতটা বছর কেটে গেলেও সেই বিভীষিকা যেন এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি পৌলমী। যখন ঘটনা ঘটেছিল তখন সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এখন সে পড়ে ক্লাস এইটে। এখনও সেই ভয়াবহ স্মৃতি যেন তার চোখে ভেসে বেড়ায়। আর ভোট আসলেই আতঙ্কিত দিন কাটে পৌলমীর।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে ব্যাপক বোমা বিস্ফোরণ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচ কিশোর হাসপাতালে
অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া পৌলমীর কথায়, ‘ভোট এলেই যেন আমার ভয় লাগে। চারদিকে যখন বোমার খবর শুনি তখন আমি আরও ভয় পাই। আর কারও সঙ্গে, আর কোনও বাচ্চার সঙ্গে যেন এরকম না হয়। নয়তো সে মানসিক ও শারীরিক দুই ভাবেই ভেঙে পড়বে।’ পৌলমীর মা দিপালী হালদার জানান, এই দুর্ঘটনার পরে তৃণমূলের নেতারা তাঁদের পরিবারকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন। এমনকী পৌলমীর জন্য কৃত্রিম হাতেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
কী ঘটেছিল?
ভয়ঙ্কর সেই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ২০শে এপ্রিল। প্রতিদিনকার মতো সেদিন সকালেও বাড়ির সামনের ফুল গাছ থেকে ফুল তুলতে গিয়েছিল পৌলমী। গাছের নীচেই পড়েছিল একটি বোমা। বল ভেবে সেটি হাতে তুলে নিয়েছিল পৌলমী। সে আনন্দে দাদুকে সেটা দেখাতে গিয়েছিল। তার দাদু সেটি বোমা বুঝতে পেরে নাতনীকে বোমাটিকে ফেলে দিতে বলেন। আর তাতেই ঘটে বিস্ফোরণ। বাঁ হাত উড়ে যায় পৌলমীর। বসিরহাটের হাড়োয়া থানার গোপালপুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু হালদার ও দিপালী হালদারের ছোট মেয়ে পৌলমী হালদার। এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার পর স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোগিতায় ও ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসের উদ্যোগে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করা হয় পৌলমীর জন্য। তবে এখন সে বড় হয়ে যাওয়ায় আর সেই কৃত্রিম হাত ঢুকতে চায়না বলে দাবি পরিবারের।
পৌলমীর মায়ের অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূল নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন যে আগামী দিনে পরিবারের পাশে থাকবে। তাছাড়া, তাঁকে চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিউসির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘কোভিডের জন্য একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলে আমি শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’
এনিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বিজেপি। দলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, ‘তৃণমূল শুধু প্রতিশ্রুতিই দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা আর রূপায়িত হয় না।’