মহাপঞ্চমীর দিন ‘কাছের মানুষ’ নিয়ে হাজির হচ্ছেন দেব। সঙ্গী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ইশা সাহা। দীর্ঘসময় পর রুপোলি পর্দায় টলিউডের দুই সুপারস্টারকে একফ্রেমে দেখতে উত্তেজিত দর্শক। ছবি মুক্তির আগে ‘কাছের মানুষ’ থেকে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি সব কিছু নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনেতা-প্রযোজক দেব। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়।
কাছের মানুষের ট্রেলার,গান নিয়ে দারুণ রেসপন্স। খুব সময়োপযোগী সাবজেক্ট। ডিপ্রেশনের মতো সংবেদনশীল বিষয়, কী বলবে?
দেব: প্রত্যেক মানুষের জীবনে ওঠাপড়া থাকে। সেটা জীবনের অঙ্গ। তুমি উঠলে তোমাকে নামতে হবেই। ডিপ্রেশনে আছি মানেই সুইসাইড করতে যাব তা নয়, আমিও ডিপ্রেশনে ভুগেছি। যখন সাংসদ হলাম, তখন পরপর আমার ছবি ফ্লপ করা শুরু করল। তখন আমি দেখলাম নায়িকারা আমাকে এড়িয়ে চলছে। সবাই বলেছিল আমি শেষ হয়ে গেছি। কিন্তু দেখ আমার গত কয়েকটা ছবি ভালো ব্যবসা করেছে। হিরোইন আমার ছবি ছেড়ে চলে গেছে, পোস্টার লঞ্চ করেছি তাঁকে নিয়ে। শ্যুটিং-এর আগে সে না বলে দিয়েছে। আমার হাউসফুল ছবি হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার শেষ চারটে ছবি চলেছে। জীবনে কোনও কিছু শেষ হওয়া মানে জীবনটা শেষ হওয়া নয়। সব পরিস্থিতি থেকেই ফিরে আসা যায়।
‘কাছের মানুষ’ তাহলে দেবের নতুন এক্সপেরিমেন্ট?
দেব: আমার মনে হয় এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ‘কাছের মানুষ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলে। এটা কিন্তু ডিপ্রেশিং ছবি নয়, বরং জীবনের গল্প বলে এই ছবি। সেলেব্রিটিরা আত্মহত্যা করছে, কতকিছুই ঘটছে চারিদিকে- এই ছবিটা মানুষকে বোঝাবে কী করে কারুর খারাপ সময়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠা যায়। এই ছবির সঙ্গে আই অ্যাম ব্যাক টু মাই এথিকস। আমি এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসি, এটাও তেমন একটা ছবি।
দর্শকই আমার অনুপ্রেরণা। আমি যখন দেখি আমার দর্শক হলে আসছে কিন্তু সেখানে বাংলা ছবি চলছে না। তখন তাঁদের মান-সম্মানের কথা ভাবতে হয়। দক্ষিণের ছবি, বলিউডের ছবি বা হলিউড ফিল্ম- তাঁদের সঙ্গে একমাত্র কনটেন্ট দিয়েই আমি লড়াই করতে পারব। আমার কাঁধে ৮ কোটি বাঙালি দর্শকের দায়িত্ব আছে।
টলিউডের বন্ধুরা রমরমিয়ে হিন্দি ছবিতে কাজ করছে। দেব বলিউডে কাজ করছে না কেন?
দেব: তাহলে বাংলা ছবিতে কে কাজ করবে? আমি এখানেই হ্যাপি। আমি কাউকে অপমান করছি না। অফ কোর্স তাদের যাওয়া উচিত। কিন্তু আমরাও যদি চলে যাই তাহলে বাংলা ছবিকে কে দেখবে? আমি পালিয়ে যেতে পারব না।
তোমার ‘কাছের মানুষ’ বুম্বাদাকে নিয়ে কী বলবে? অনেক দিন পর একফ্রেমে দর্শক তোমাদের দেখবে।
দেব: আমাদের ওয়েব লেনথটা খুব ম্যাচ করে। দুজনেই ২৪ ঘন্টা ছবি নিয়ে ভাবি, বাংলা ছবিকে ভালোবাসি। আমাকে যারা চেনে তাঁরা জানে, দেব রাজনীতিতে থাকলেও ছবি নিয়েই সারাক্ষণ ভাবে। সেটাই আমাদের দুজনের কমফর্ট জোনটা তৈরি করেছে। আমরা নিজেদের শিল্প নিয়ে খুব সৎ, সেটাই এখানে উঠে এসেছে। কেউ কারুর উপর প্রভুত্ব ফলানোর চেষ্টা করেনি। সত্যি বলতে, প্রযোজক হিসাবে দেব আর প্রসেনজিৎ-কে এই ছবিতে কাস্ট করতে পেরে আমি খুব হ্যাপি। (লাজুক হাসি)
প্রযোজক হিসাবে দেবকে পুরো নম্বর দিয়েছে ইশা… (প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই নায়িকার ডাক পড়ল)
দেব: হ্যাঁ, রে ইশা প্রযোজক হিসাবে আমি বেশি ভালো, আর অভিনেতা হিসাবে আবির বেশি ভালো? তাই তো? দুজনকেই হাতে রাখা হচ্ছে? (রুখে দাঁড়িয়ে ইশা বলেলন, এমন কোনও প্রশ্নই আমাকে করা হয়নি। বলেছি প্রযোজক হিসাবে দেবের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। আবিরের প্রসঙ্গই ওঠেনি)
[নায়ক-নায়িকার খুনসটির জেরে সাক্ষাৎকারে কিঞ্চিত বিরাম]
আলোচনায় ফেরা গেল….
তা ‘গোলন্দাজ’-এর পর ফের দেব-ইশার অনস্ত্রিন প্রেম নজর কাড়ছে, এই রসায়ন নিয়ে কী বলবে?
দেব: সত্যি বলতে আমার মনে হয় ইশা খুব আন্ডাররেটেড অভিনেত্রী। কোথাউ মনে হয়, ওকে একই প্যাটার্নের ছবি দেওয়া হয়। ও কিন্তু মেইনস্ট্রিম ছবিরও খুব শক্তিশালী অভিনেত্রী। ওর মধ্যেও একটা প্রাণোচ্ছ্বল ব্যাপার আছে। কিন্তু ওকে কাস্ট করা হয় না তেমন ছবিতে। এই ছবির ‘চুম্বক মন’ গানটা সেই অর্থে ইশার প্রথম কমার্শিয়্যাল গান। এর আগে ওকে এত হাসিখুশি কোনও ছবির গানে দেখা যায়নি। ইশার গানগুলো খুব দুঃখ, কষ্ট আমরা আগে দেখেছি, তাই তো? (ইশার দিকে ইশারা)। আমার মতে ইশা আমাদের সময়কার অন্যতম ভার্সাটাইল অভিনেত্রী। (নিজের প্রশংসা শুনে আনন্দে গদগদ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইশা)
ইন্ডাস্ট্রিতে দেবের সবচেয়ে কাছের মানুষ কে? (রুক্মিণীর নাম নেওয়া বারণ)
দেব: (খানিক ভেবে) আমার দর্শক। তাঁদের চেয়ে কাছের আর কেউ নেই। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেয়েছি তাঁদের কাছ থেকে।
প্রযোজক দেব চিন্তিত ‘বয়কট সংস্কৃতি’ নিয়ে?
দেব: না, একদম নয়। আগে ছবিটা ভালো বানাই। তাহলে যারা দেখবার নয় তারাও দেখবে। আমার মনে হয় দর্শক আমাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাবে। আমি বাংলা ছবি নিয়ে ভাবছি, সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমি নতুনদের সুযোগ দিচ্ছি, সেটা কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না। পথিকৃৎকে (কাছের মানুষের পরিচালক) দ্যাখো, বুম্বাদা পর্যন্ত ভাবতে পারেনি এই ছবিটা ও করতে পারবে। যারা ওর জন্য অফিসের দরজা পর্যন্ত করে দিয়েছিল তাঁরা এখন ওকে (পথিকৃৎ)কে নিজেরা ডাকছে ছবি বানানোর জন্য। ও চারটে ছবি সাইন করেছে। আমার একটাই চেষ্টা, যাদের একটু সাপোর্ট করলে তারা বাংলা ছবির জন্য ভালো কাজ করতে পারবে, তাদের সেই সাপোর্টটা দেওয়া। আমি তো দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি যে জিনিসটা পারি না সেটা করি না, যেমন পলিটিকস কিন্তু যেটা পারি সেটা পরিশ্রম। যদি আপনারা আমার সেই পরিশ্রমটা দেখতে না পান তাহলে সরি…