টলিপাড়ায় আজ শ্যুটিং-এর ঝাঁপ বন্ধ। মেগা সিরিয়াল থেকে সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ- কোনও কিছুরই শ্যুটিং হচ্ছে না। কারণ? বৃহস্পতিবার বিকালে ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন। আর সেখানে হাজিরা দিতে হবে টলিপাড়ার কলাকুশলীরদের তাই এমন সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার শ্যুটিং বন্ধ রাখতে হবে, এই নিয়ে বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তি (নিন্দকরা বলছেন নির্দেশ) জারি করা হয়েছে ফেডারেশনের তরফে। ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কাস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ‘সিনেমা ও ভিডিয়ো শিল্পের’ যাবতীয় শ্যুটিং যেন বন্ধ রাখা হয়।
এই নিয়ে হইচই কাণ্ড টলিপাড়ায়। শাসক-বিরোধী শিবিরে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। করোনা কাটা অতিক্রম করে দীর্ঘ দু-বছর পর স্বমহিমায় ফিরছে চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেই উৎসবের শুরুতেই বিতর্ক দানা বাঁধল। ফেডারেশনের বিবৃতি বলছে, এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রিতদের মধ্যে টলিপাড়ার বড় অংশও রয়েছে। তার জেরেই শুটিং বন্ধের বিবৃতি। তবে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে টলিপাড়ার অন্দরে।
১৩ ডিসেম্বর তারিখ দেওয়া ফেডারেশনের বিজ্ঞপ্তি পেয়ে অনেকেই পূর্বনির্ধারিত ছবির বা সিরিয়ালের শ্যুটিং বাতিল করতে বাধ্য হন। গোটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট লিখেছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। অভিনেত্রী লেখেন,'আমারও আজ (বৃহস্পতিবার) সিনেমার শুটিং ছিল। গত কাল ক্যানসেল হয়ে গেল। শুনলাম মেসেজ এসেছে, শুটিং রাখা যাবে না। কি মজা !! হঠাৎ পাওয়া ছুটি এমন উত্তেজনা এনে দেয়, মনে হয় একদিনে অনেক কিছু করে ফেলি। প্রযোজক/ পরিচালক (মানে যাঁরা আসলে সিনেমা-টা বানাচ্ছেন) চুলোয় যাক, আজকের বুক করা লোকেশনটা আবার কবে ফাঁকা আছে তাঁরা দেখুক,সব শিল্পী ও কলাকুশলীরা আবার কবে ফাঁকা আছে তাই মিলিয়ে আবার একটা শুটিং এর তারিখ ধার্য হোক। এ বছর সম্ভব না হলে পরের বছর হবে। কি আছে? এই প্রসঙ্গেই ওই পোস্টে সুদীপ্তার কটাক্ষ ‘সিনেমার স্বার্থে সিনেমাকর্মীদের এই স্বার্থত্যাগ সিনেমার ইতিহাস নিশ্চয়ই মনে রাখবে।’
এখানেই থেমে থাকেননি অভিনেত্রী। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য নাম না করে উৎসব কর্তাদের কাছে ‘প্রস্তাব’ও দিয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। ‘রান্নাঘরের গপ্পো’র সঞ্চালিকা বলেছেন, বছরের শুরুতেই এই ‘ছুটি’ ঘোষণা করে দিলে শেষ মুহূর্তে শ্যুটিং বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। সুদীপ্তার কথায়, ‘প্রযোজক বা পরিচালকদের টাকাপয়সা লস করতে হয় না, চোখের সামনে সব প্ল্যানিং ঘেঁটে ঘ হতে দেখতে হয় না। সিরিয়ালগুলোর নন-টেলিকাস্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘শুধু আর্টিস্ট দেখা এবং উদ্বোধনী ছবি দেখায় থেমে না থেকে আমরা যাতে একটু ভাল সিনেমা দেখারও সুযোগ পাই, তার জন্য ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১০ দিন সমস্ত শুটিং বন্ধ রাখা হোক। আমরা ফিল্ম, টিভি, ওয়েব সিরিজ ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত অভিনেতা ও কলাকুশলী ১০ দিন ধরে চুটিয়ে সিনেমা দেখি। তার পরে উত্তেজনায় টগবগ করতে করতে আবার যাই সবে নিজ নিজ শুটিংয়ে।’
প্রকাশ্যে সুদীপ্তার এমন শাসক দল-বিরোধী পোস্ট দেখে নেটিজেনরা নানারকম মন্তব্য করেছেন। বিজেপির রূপা ভট্টাচার্য, হাতহাতির ইমোজি দিয়ে সাধুবাদ জানান সুদীপ্তাকে। অন্যদিকে এক নেটিজেন লেখেন, ‘আহা দিদি এইসব কেন লিখলেন, উনি রাগ করবেন তো’। একজন নেটিজেন লেখেন, ‘লিখেছো ঠিক আছে, পরে আবার ডিলিট করে দিও না’। জবাবে সুদীপ্তা লেখেন, ‘আজ অবধি তেমন কিছু করতে হয়নি ভাস্কর দা। ভবিষ্যতের কথা জানি না।’
এই বিতর্ক নিয়ে সাফাই দিয়ে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, সারাদিনের জন্য শ্যুটিং বন্ধ রাখা হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ফের শ্যুটিং চালু করা যাবে। যদিও এই মৌখিক সাফাইয়ের কথাটি বিজ্ঞপ্তির কোথাউ উল্লেখ নেই। তাছাড়া সারাদিনের লোকেশন বুকিং করে, কয়েকঘন্টা শ্যুটিং করলে আখড়ে প্রযোজকেরই ক্ষতি। কারণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁকে। এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায় সেটাই দেখবার।