ভারতীয় টেলিভিশনের পর্দার অন্যতম হিট গেম শো কৌন বনেগা ক্রোড়পতি, শীঘ্রই অনুষ্ঠানের নতুন সিজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। ফি-বছর দেশের নানান প্রান্ত থেকে আম জনতা এসে এই শোয়ে নিজের ভাগ্য বদলান। কেসিবির ইতিহাসের অন্যতম চর্চিত বিজেতা চম্পারণের সুশীল কুমার। যিনি এই গেম শোয়ের পঞ্চম সিজনে পাঁচ কোটি টাকা জিতে চমকে দিয়েছিলেন দেশবাসীকে। সালটা ২০১১। তবে এই শোয়ে ৫ কোটির মোটা অঙ্ক জেতার পর তাঁর জীবনের মুশকিল আসান হয়নি, বরং অনেক বেশি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছিল জীবন। সেই চ্যালেঞ্জের কথাই সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন সুশীল।
বিপুল পরিমাণ অর্থের নেশায় বুঁদ হয়ে মদ,সিগারেটের নেশায় ডুবে গিয়েছিলেন সুশীল। তিনি জানান প্রতারকরা তাঁকে ঠকিয়ে প্রচুর টাকা হাত করে নেয়। এমনকি নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পর্যন্ত সম্পর্কে চিড় ধরে যায় সুশীলের। তাঁর সাজানো জীবনটাই ছারখাড় হয়ে যায়।
এই খোলা চিঠির শিরোনাম হিসাবে তিনি লিখেছেন- ‘আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় শুরু হয় যখন আমি কেবিসি জিতি’।
সুশীল লেখেন, কেবিসিতে জয় লাভের পর মাসের মধ্যে ১৫ দিন বিহারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হতে তিনি। যার জেরে তাঁর পড়াশোনা শিকেয় উঠে। সংবাদমাধ্যম সবসময় তাঁর সাক্ষাত্কার নিতে মশগুল থাকত, তার জীবনে কী ঘটছে সেই নিয়ে বিস্তর উত্সাহ ছিল মিডিয়ার। তাই চটজলদি বেশ কিছু ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিনি, যাতে মিডিয়াতে তিনি বলতে পারেন তিনি কী করেছেন। বেশিরভাগ জায়গায় বিনিয়োগ করা টাকাই ডুবে যায়।
কেবিসিতে পাঁচ কোটি জেতার জেরে সমাজকর্মী হিসাবেও কাজ শুরু করেন সুশীল। প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে হাত থেকে সব টাকা বেরিয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় কোনও মানুষের উপরই ভরসা রাখতে পারছিলেন না তিনি, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত বচসার জেরে তাঁকে ডিভোর্স দিতে বসেছিলেন।
একটা সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন সুশীল। এরপর একটা সময় ঘন্টার পর ঘন্টা ল্যাপটপে ছবি দেখে কাটিয়ে তিনি ফিল্মমেকার হওয়ার পরিকল্পনা নেন। ফের মুম্বইতে পৌঁছান। কিন্তু লোকে তাঁকে টেলিভিশন দিয়ে কাজ শুরু করবার উপদেশ দেয়। সেই মতো একটি চিত্রনাট্য লেখেন সুশীল, যা কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, জানিয়েছেন কেবিসির পঞ্চম সিজনের পাঁচ কোটির বিজেতা। তিনি লেখেন, ‘নিজেকে খুঁজে পেতে হলে মানুষকে সেটাই করতে হয় যা তোমার হৃদয় বলে, যদিও নিজের ইগোকে কোনওদিনই সন্তুষ্ট করা যায় না। সফল এবং জনপ্রিয় মানুষ হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি দামি’।
জীবনের এই চরম সত্যিটা উপলব্ধি করবার পরেই ২০১৬ সালে মুম্বই থেকে চম্পারণ ফিরে আসেন সুশীল। এবং মদের নেশা পুরোপুরিভাবে ছেড়ে শিক্ষক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। গত এক বছর ধরে সিগারেটেও হাত দেননি সুশীল, লিখেছেন কৌন বনেগা ক্রোড়পতির হটসিটে বসে পাঁচ কোটির প্রশ্নের সঠিক উত্তরদাতা।