নজরুল মঞ্চে গুরুদাস কলেজের ফেস্টে দু-ঘন্টা ধরে পারফর্ম করবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৃথিবীকে ‘অলবিদা’ জানালেন কেকে। যে প্রাণচ্ছ্বল মানুষটা দু-ঘন্টা ধরে গরম আর ঠাসা ভিড় (দর্শকাসনের চেয়ে প্রায় তিণগুন) উপেক্ষা করেই ফ্যানেদের বিনোদনের রসদ জোগালো সে চলে গেল একদম চুপিসাড়ে। তবে 'অভিশপ্ত' মঙ্গলবারের ওই সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চের সামনে একগাদা অনুরাগীর ভিড় দেখে নাকি গাড়ি থেকে নামতেই চাননি কেকে। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন, ওই দিন কেকে-র আগে নজরুল মঞ্চে পারফর্ম করা শিল্পী শুভলক্ষ্মী দে।
তিনি জানান, 'সেদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় এসে পৌঁছন কেকে৷ প্রথমে তিনি বলেছিলেন যে ভিড় যদি সরানো না যায় তাহলে নজরুল মঞ্চের সামনে তিনি গাড়ি থেকে নামবেনই না৷’
আসলে ওইদিন শরীরটা শুরু থেকেই আনচান করছিল কেকে-র। কিন্তু শিল্পীর কমিটমেন্ট বলে কথা! অ্যান্টিঅ্যাসিড খেয়ে কাঁধ আর হাতের ব্যাথা অগ্রাহ্য করেই মঞ্চে মাতাতে নামেন কেকে। শরীর জানান দিচ্ছিল আগে থেকেই কিন্তু ইশারাটা বুঝতে পারেননি ‘ইয়ে.. পল’ গায়ক।
শুভলক্ষ্মী জানান, ‘গ্রিনরুমে বাইরের কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি, তবে আমি পেরেছিলাম। আমার সঙ্গে বার কয়েক কথা হয়েছে। তখন তো ঠিকই ছিলেন। আমি ওঁনার সঙ্গে ছবিও তুলি। আমার দেখে মনে হয়নি কোনও অসুবিধা হচ্ছিল’।
ওইদিন স্টেজে পারফর্ম করবার সময় আয়োজকদের স্টেজের লাইট বন্ধ করতে বলেন কেকে, তোয়ালে দিয়ে বারবার তাঁকে ঘাম মুছতে দেখা গিয়েছে। গায়িকার কথায়, ‘ঘাম তো ঝরবেই যতই হলে অনেক বেশি সংখ্যক দর্শক থাকে। উনি স্টেজের আলোও কমাতে বলেছিলেন। যদি উনি একবার বলতেন যে অস্বস্তি হচ্ছে শরীরে, আমরা শো’টা থামাতে পারতাম'।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। তাঁর হৃদযন্ত্রেও বেশ কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে, আসলে হার্টের সমস্যাকে হজমের গণ্ডোগোল ভেবে মুঠোমুঠো অ্যান্টিঅ্যাসিড খাচ্ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী গায়ক, আর সেটাই কাল হল কেকে-র!
বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে কলকাতার রবীন্দ্র সদনে প্রয়াত গায়ককে গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। স্বল্প সময়ের জন্য রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গনে শায়িত ছিল কেকে-র কফিনবন্দি দেহ। তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরদিন মুম্বইয়ের ভারসোভা মহাশ্মশানে গায়কের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কেকে- রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান নকুল ও তামারাকে। আর থাকল কেকে-র অজস্র হিট গান, যার মধ্যে আজীবন বেঁচে থাকবেন তিনি।