বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > ‘নেতাজির নাম ভাঙিয়ে টাকা কামানো বন্ধ হোক', এই দাবি নিয়ে আইনি পথে হাঁটছে পরিবার

‘নেতাজির নাম ভাঙিয়ে টাকা কামানো বন্ধ হোক', এই দাবি নিয়ে আইনি পথে হাঁটছে পরিবার

বড় সিদ্ধান্ত বসু পরিবারের

বক্স অফিসে ফায়দা লুটতে নেতাজির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে ফিল্ম নির্মাতারা, চুপ সিবিএফসিও। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ বসু পরিবার। হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করবে নেতাজির উত্তরাধিকারীরা। 

'টাকা কামানোর জন্য নেতাজির নামের অপব্যবহার বন্ধ হোক'-আর্জি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের। ‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’ ছবি মুক্তির ঠিক আগেই এমন ঘোষণা পরিবারের। এই ছবির বিষয়কেন্দ্রে রয়েছেন নেতাজি। সুভাষ চন্দ্র বসুর নাম ভাঙিয়ে বক্স অফিসে ব্যবসা করাবর এই রেওয়াজ বন্ধ করতে আইনি পথে হাঁটবার কথাও ভাবছে বসু পরিবার। 

অক্টোবরের শেষভাবেই মুক্তি পাওয়ার কথা ‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’-এর। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবির পরিচালক অম্লান কুসুম ঘোষ জানিয়েছেন, নেতাজিকে নিয়ে ‘ভুয়ো বিতর্ক’ তৈরি মোটেই তাঁর উদ্দেশ্য নয়।

'জ্ঞাতজনের অজ্ঞাতবাস' উপন্যাস লিখেছিলেন অম্লান। তার ভিত্তিতেই তৈরি এই ছবি। ২০১৬ সাল থেকে এই ছবি নিয়ে কাজ করছেন পরিচালক। এই ছবিতে দেখা মিলবে ‘গুমনামী' বাবারও। ১৯৪৫ সালের অগস্ট মাসের বিমান দুর্ঘটনায় হয়তো বা মৃত্যু হয়নি সুভাষচন্দ্র বসুর। সন্ন্যাসীর বেশে তিনি ভারতে ফিরে এসেছিলেন-এমনই কিছু তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই তৈরি এই ছবি। 

নেতাজির পপৌত্র চন্দ্র কুমার বসু রীতিমতো ক্ষিপ্ত, কীভাবে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের তরফে এই ধরণের ‘তত্ত্ব’ ভিত্তিক ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘এটা একটা প্র্যাক্টিসে পরিণত হয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালকরা নেতাজিকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন সেইসব সরকারি কমিশনের রিপোর্ট না জেনে বা পড়ে যেখানে বলা হয়েছে তাইপেই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নেতাজির’। তিনি আরও বলেন, ‘এই ছবিগুলোতে নেতাজির ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। যা করা যায় না।  নিজেদের নেতাজির রিসার্চার বলা লোকজন বা ছবি পরিচালকরা নেতাজির মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীর সঙ্গে একজন সন্ন্যাসী (গুমনামী বাবা)-র তুলনা টেনে চলেছে যার কোনও ভিত্তি নেই’। 

চন্দ্র কুমার বসু আরও জানান, এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার ব্যাপারে আইনি শলা-পরামর্শ নিচ্ছে পরিবার। কলকাতা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করবার কথা ভাবছে পরিবার। 

অম্লান বসু দাবি করেছেন ‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’ ছবির ভিত্তি সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মনোজ কুমার মুখোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার। ১৯৯৯ সালে কেন্দ্র সরকার তাঁর উপরই নেতাজির রহস্যমৃত্যুর তদন্তের ভার সঁপে ছিল। 

মুখার্জি কমিশন ২০০৬ সালে সংসদে নিজেদের রিপোর্ট পেশ করেছিল, সেখানে বলা হয় ১৯৪৫ সালে তাইপেই প্লেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি নেতাজির। এবং জাপানের রেনকোজি মন্দিরে নেতাজির যে চিতাভস্ম সংরক্ষণ করা রয়েছে তা আদৌ ওঁনার নয়। 

পরবর্তীতে মুখার্জি কমিশনের এই রিপোর্ট অমান্য করে বহু তদন্তকারী দল। মুখার্জি কমিশনের রিপোর্টে খামতি রয়েছে এমনটাই দাবি করেছিল সুভাষের পরিবারও। আজ পর্যন্ত নেতাজি ওই চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষার দাবি বারবার উঠলেও সেটি করা হয়নি। 

বসু পরিবারের এই পদক্ষেপ নিয়ে পরিচালক জানান, এটা তাঁর উদ্যোগের (ছবি) জন্য ভালো। ‘ভুয়ো বিতর্ক সত্যের সাধনার জন্য সেরা। তবে নির্ভেজাল মানুষরা কোনওদিন পাবলিসিটির পিছনে দৌড়ান না’, দাবি পরিচালকের। 

অন্যদিকে ২০১৯ সালে নেতাজির জীবন নিয়েই ‘গুমনামী’ তৈরি করেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এই বিতর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি এই ছবির নির্মাতারা।

 

বন্ধ করুন