৮ বছর আগের ১৭ জানুয়ারি পথ চলা শেষ হয়েছিল সুচিত্রা সেনের। চোখের জলে বাঙালি বিদায় জানিয়েছিল তাঁর 'মহানায়িকা'কে। পর্দার বাইরেও একইসঙ্গে তাঁর দাপুটে ও মোহময়ী ব্যক্তিত্বের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন 'মিসেস সেন'। সুবিদিত ছিল তাঁর খামখেয়ালি মেজাজের কথাও। ২০১৪ সালে একটি পোর্টালে প্রকাশিত লেখা থেকে জানা যায় এমনই মজার এক ঘটনার কথা, যা কোনও এক সময় বলেছিলেন 'মহানায়িকা'র জীবনীকার তথা প্রাক্তন সাংবাদিক গোপাল কৃষ্ণ রায়। ফোনের ওপর থেকে একবার সরাসরি এই সাংবাদিককে সুচিত্রা বলে উঠেছিলেন, 'আপনাকে তো অত সহজে চুমু দেব না।' শোনামাত্রই হতভম্ব হয়ে গেছিলেন গোপালবাবু।
সত্তর দশকে অন-স্ক্রিন চুম্বন দৃশ্য কতটা গ্ৰহণযোগ্য তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল দেশ। অন স্ক্রিন চুম্বন দৃশ্য দেখানো ঠিক না ভুল তাই নিয়ে শুরু হয়েছিল গণ্ডগোল। বিতর্কের আঁচ পৌঁছেছিল সংসদ পর্যন্ত। সেই সময়ে ইউএনআই-এর অন্যতম নামকরা সাংবাদিক গোপালবাবু এই বিষয়টির উপর বিনোদন জগতের নামকরা ব্যক্তিত্বদের মতামত জানার জন্য একগোছা প্রশ্ন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-দের পাঠিয়েছিলেন। ওই তালিকায় ছিলেন 'মহানায়িকা'-ও। সকলেই সেইসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের সুচিন্তিত মতামত জানিয়েছিলেন গোপালবাবুকে। একমাত্র জানাননি 'মিসেস সেন'।
শেষমেশ দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে সুচিত্রা সেন-কে ফোন করেন গোপালবাবু। ফোন তুলে কোনও ভূমিকা না করে সাংবাদিককে 'মহানায়িকা' বলে ওঠেন, 'এত সহজে তো আপনাকে চুমু দিতে পারব না আমি!' মজার ছলে একথা বলা হলেও বুঝতে পারেননি গোপালবাবু। অভিনেত্রীর কথায় রীতিমতো চমকে ওঠেন তিনি। পরে বিষয়টি তাঁর বোধগম্য হলেও পাল্টা তিনিও জবাব দিয়েছিলেন, সেক্ষেত্রে আপনার মতামত ছাড়াই আমার এই প্রতিবেদন ছাপা হবে। এবং তাইই হয়েছিল।
তবে এর শেষ এখানেই নয়। এই বিশেষ ঘটনার পর ধীরে ধীরে আলাপ শুরু হয় সুচিত্রা সেন এবং গোপাল কৃষ্ণ রায়ের মধ্যে। সেই আলাপ পৌঁছয় বন্ধুত্বে। এতটাই যে পরবর্তী সময় জন্মান্স থেকে যখন নিজেকে আড়াল করে রাখা শুরু করলেন 'মহানায়িকা', তখন যে কয়েকজন মানুষের জন্য তাঁর বাড়ির দ্বার অবদারিতভাবে খোলা থাকত তাঁর মধ্যে ছিলেন গোপালবাবুও। বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সন্ধ্যায় আড্ডা মারার জন্য গোপালবাবুকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিতেন সুচিত্রা। গোপালবাবু বলেছিলেন, 'বয়স হলেও তাঁর দাপট তখনও কমেনি একটুও। অটুট ছিল তাঁর সেই বিখ্যাত খামখেয়ালি মেজাজ। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে পর্যন্তও আমাকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই এদিক ওদিক বেরিয়ে পড়তেন। অবশ্যই নিজেকে লুকিয়ে। বারণ করলেও শুনতেন না। ওঁর এক প্রিয় দর্জির দোকান ছিল। সেখানে হঠাৎ হঠাৎ হাজির হয়ে দিব্যি গল্প জুড়ে দিতেন।'
ব্যক্তিত্বে এতসব রঙের মেজাজ থাকার দরুণ তাই তো আজও 'মহানায়িকা' বললে আপামর বাঙালির চেতনায় ভেসে ওঠে কেবল ওই একটি নাম, 'সুচিত্রা সেন'।