দেখতে দেখতে ৪৩ দিন অতিক্রান্ত। সুশান্ত সিং রাজপুতের চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না দেশ। আদরের 'গুলশন'কে (সুশান্তের ডাকনাম) হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার।চার দিদির আদরের একমাত্র ভাই সুশান্ত সিং রাজপুত। তবে ছোটবেলা থেকেই দিদি শ্বেতা সিং কীর্তির সবচেয়ে কাছের ছিলেন সুশান্ত। কারণ দুজনের বয়সের ফারাক মাত্র ১ বছরের। পিঠাপিঠি এই ভাইবোনের বড়ো হয়ে উঠবার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অনেক কাহিনি, অনেক স্মৃতি। এদিন মনের ভিতরের জড়ো হয়ে থাকা বেশ কিছু স্মৃতি ভাগ করে নিলেন শ্বেতা সিং কীর্তি। সামনে আনলেন সুশান্তের ছেলেবেলার ছবি, ১৩ বছর আগে শ্বেতার বিয়ের ছবি এবং ১০ই জুন সুশান্তের সঙ্গে হওয়ার তাঁর কথোপকথোনের স্ক্রিনশট। খুব সম্ভবতই মৃত্যুর চারদিন আগে এটাই শেষ কথা ছিল দুই ভাইবোনের।
১০ই জুন ঠিক কী কথা হয়েছিল শ্বেতা আর সুশান্তের?
৯ই জুন শ্বেতা সুশান্তকে মেসেজ করেন, 'কেমন আছিস আমার বাবু? আই লাভ ইউ। আমার কাছে এখানে আসবি ভাই? চলে আয় না তুই আর রানি দিদি?' জবাবে সুশান্ত ১০ তারিখ লেখেন, 'হ্যাঁ, দিদি খুব মন চাইছে'। শ্বেতা পাল্টা মেসেজ করেন, ‘তাহলে চলে আয় না বেবি..একমাসের জন্য ঘুরে যা.. এখানে এসে একটু চিল কর…খুব ভালো লাগবে তোর..আমি আমার বন্ধুদের বলব না তুই এসেছিস, তোকে কেউ এসে বিরক্ত করবে না। কারুর সঙ্গে দেখা করতে হবে না। আমরা একটা ভালো সময় কাটাব। আমরা একসঙ্গে ঘুরতে যাব, লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ব কিংবা হাঁটতে হাঁটতেই দূরে কোথাউ পৌঁছে যাব। দেখ আমি সেদিন কোথায় গিয়েছিলাম হাঁটতে হাঁটতে’। এর সঙ্গে একটা সুন্দর পাহাড়ি রাস্তার ছবি জুড়ে দেন শ্বেতা। ছবিতে নীল আকাশে রয়েছে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, নদী আর পাহাড়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা। বিয়ের পর থেকেই মার্কিন মুলুকের স্থায়ী বাসিন্দা সে। ২০০৭ সালে বিয়ে হয় শ্বেতার। এদিন সুশান্তকে নিয়ে এদিন একটি আবেগঘন বার্তা পোস্ট করেন শ্বেতা। লেখেন তাঁর জন্মের কাহিনি। কেমনভাবে প্রথম ছেলেকে হারানোর পর অনেকে মানত, অনেক পুজো, অনেকে চিকিত্সার পর ছেলের মুখ দেখেছিল তাঁর বাবা-মা। জানান কেমনভাবেই ছোট থেকে সকলে তাঁকে বলত, শ্বেতা বাড়ির লক্ষ্মী, তাই তো শ্বেতার জন্মের এক বছর সুশান্ত জন্মেছে। সেই ভাবনা থেকেই ছোটভাইকে সবচেয়ে যত্নে রাখত সে। ভাবত সুশান্ত তাঁর জন্য এই পৃথিবী এসেছে। তাই তাঁকে আগলে রাখবার দায়িত্বটাও তাঁর। গুড়িয়া-গুলশন ছিল দুটো ভিন্ন দেহে আটকানো একটা প্রাণ। স্কুলের দিনের স্মৃতি থেকে বিয়ের পর ভাইয়ের থেকে দূরে চলে যাওয়ার অম্লমধুর স্মৃতি সবই উঠে এসেছে শ্বেতার এদিনের লেখনিতে। সুশান্তের দিদি লেখেন, ‘আমি শুনেছি দুঃখ ভাগ করে নিলে কমে যায়, তাই আপনাদের সঙ্গে এই কথাগুলো ভাগ করে নিচ্ছি’।
সব শেষে শ্বেতা লেখেন, 'যদি আমি পারতাম সবকিছু থেকে ওকে রক্ষা করতে….এখনও রোজ ভাবি আমি ঘুম থেকে উঠে ভাইকে দেখব…দেখব আমার পাশেই রয়েছে,ভাবব এই গোটা এপিসোডটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল আর কিচ্ছু নয়'।