হালে গর্ভধারণের ৩৫ সপ্তাহ পর গর্ভপাতের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সুপারিশ মেনে এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, গর্ভপাতের সময় কোনও জটিলতা হলে তার দায় নেবে না আদালত বা চিকিৎসকরা।
ভারতের আইন অনুসারে গর্ভধারণের পরবর্তী ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত বৈধ। বিশেষ ক্ষেত্রে তার পর গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তেমনই আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার এক দম্পতি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ৩৫ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দেন বিচারপতি।
ভারতে র্গভপাত আইন অত্যন্ত স্পষ্ট হলেও পৃথিবীর সব দেশে তা নয়। গর্ভপাত আইনের উপর ভিত্তি করে মোটামুটি পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা যায় দেশগুলিকে।
- যে সব গর্ভপাত একেবারেই আইনসিদ্ধ নয়। কোনও অবস্থাতেই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয় না।
- মায়ের প্রাণকে গুরুত্ব দিয়ে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়।
- স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয় এই দেশগুলিতে। আর্জেন্তিনা হালে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
- সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রশ্নে গর্ভপাতের অনুমতি চাইলে, তা দেওয়া হয়।
- কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যে কোনও অবস্থায় কারণ দেখিয়ে গর্ভপাতের অনুমতি চাওয়া যেতে পারে।
ফিরে আসা যাক কলকাতার ঘটনার প্রেক্ষিতে। ভারতে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত বৈধ হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই ধরনের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগিরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত এই অনুমতি দিতে পারে। তাঁর কথায়, ‘মায়ের যদি কঠিন কোনও অসুখ থাকে, যেমন লিভারের কোনও সমস্যা বা ক্যানসারের মতো কোনও অসুখ হলে বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত এই অনুমতি দিতে পারে। আরও একটি ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয়, যদি গর্ভস্থ সন্তানের এমন কোনও ত্রুটি থাকে, যার ফলে সে ভালো জীবন নাও পেতে পারে— তাহলেও আদালত এই অনুমতি দিতে পারে।’
কলকাতার যে মহিলাকে ৩৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাঁর গর্ভের সন্তানের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে বলা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। চিকিৎসকরা তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন, গর্ভের শিশুটির বাঁচার বা স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
চিকিৎসক গৌতম খাস্তগির বলছেন, ভারতের আইন অনুসারে গর্ভধারণের পরবর্তী ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত বৈধ। কিন্তু মায়ের এবং গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর পুরোটি নির্ভরশীল।
মনোচিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ বলছেন, যদি গর্ভ নিয়ে জটিলতা থাকে, তাহলে সব সময়ই আগে মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে অবস্থাভেদে আদালতের কাছে আবেদন করা যেতে পারে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও গর্ভপাত করানোর। তাঁর কথায়, ‘Eclampsia-র মতো অসুখের ক্ষেত্রে মা এবং গর্ভের সন্তান— উভয়ের প্রাণেরই ঝুঁকি হতে পারে। সেক্ষেত্রে মায়ের জীবনের গুরুত্ব দিয়ে আইন মেনে চিকিৎসকরা গর্ভপাতের দিকে যান।’
মনোবিদ জয়িতা সাহার কথাতেও, ‘যদি আগে থেকেই জানা যায়, সন্তানের জন্মের সময়ে সমস্যা হতে পারে বা তার বাঁচার সম্ভাবনা কম, সুস্থ জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা কম, সেক্ষেত্রে গর্ভপাত করিয়ে ফেলাই সঠিক রাস্তা। দরকারে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গিয়েও মা আদালতের কাছে আবেদন করতেই পারেন।’