বলিউডে এক সময়ে চুটিয়ে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, কল্যাণজি-আনন্দজি, শঙ্কর-জয়কিষাণের মতো সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে। এত দিন মুম্বইয়ে কাজ করলে হয়তো জনপ্রিয়তা অনেক অনেক বেশি পেতেন ৭৭ বছরের এই সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু এ সব কোনও কিছুই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। শুধুমাত্র শিকড়ের টানে, গ্রামের সুরের টানে বাড়ি ফিরে কাজি সিং, চলতি বছর পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়া প্রবীণ এই সঙ্গীত শিল্পী।
‘কখনও পুরস্কার বা স্বীকৃতির জন্য সঙ্গীতচর্চা করিনি। মুম্বই থেকে একটি কারণেই ফিরে আসি। নেপালি এবং গোর্খা সঙ্গীতচর্চা করার ইচ্ছা ছিল, ইচ্ছা ছিল শ্রীমাদল বাদ্যযন্ত্রটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার’, জানিয়েছেন তিনি।
মাদল নামের মাদ্যযন্ত্রটি অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু শ্রীমাদল তার থেকে কিছুটা আলাদা। মূলত নেপালি সঙ্গীতেই ব্যবহার হয় এই যন্ত্রের। এই যন্ত্র নিয়েই প্রায় ৩৯ বছর কাজ করে চলেছেন কাজি সিং। বর্তমানে কালিম্পঙের বাসিন্দা এই শিল্পীর আগে তাঁর বাবা ইন্দ্রজিৎ সিংও এই ধরনের সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন।
১৯৪৫ সালে জন্ম কাজি সিংয়ের। বাবা-মায়ের কারণেই ছোট থেকে সঙ্গীতচর্চার উৎসাহ পান তিনি। মারুনি নাচ দিয়ে সঙ্গীতচর্চা শুরু তাঁর। ১৯৭৪ সালে মুম্বই চলে যান এই শিল্পী। ৯ বছর বলিউডে কাজ করার পরে ১৯৮৩ সালে আবার উত্তরবঙ্গের গ্রামে ফিরে আসেন কাজি সিং। তার পর থেকে পুরোপুরি কাজ করে চলেছেন স্থানীয় সঙ্গীত নিয়েই।
তাঁর ছেলে নিশান্ত সিংও সঙ্গীতশিল্পী। পাখওয়াজ-সহ অন্য বহু ধরনের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কাজ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবা কাজি সিং এখনও প্রতি দিন ৮ ঘণ্টা সঙ্গীতচর্চা করেন, সঙ্গীত নিয়ে লেখালিখি করেন। তাঁর কথায়, ‘বাবা কখনও নিজের শিকড় ভুলে যাননি। তাই বলিউড তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি।’
এত বছর পরে এসেও সেই কাজের কিছুটা স্বীকৃতি পেলেন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী।